Ad Code

Responsive Advertisement

অজীর্ণ রোগ

-:রোগ সম্পর্কে আলোচনা:-





  •  অজীর্ণ বলতে বোঝায় বদহজম বা অগ্নিমান্দ্য। হজম ক্ষমতা কমে গেলে বা দুর্বল হয়ে গেলে খাবার হজম হয় না। পরিপাক ক্রিয়া দুর্বল হয়ে পড়ার জন্য এমনটা হতে পারে। এতে শরীর তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায়না। শরীরের বিভিন্ন কাজে বিঘ্ন উপস্থিত হয়, ফলে নানা উপসর্গ দেখা যায়। আপাতদৃষ্টিতে অজীর্ণ রোগ একেবারেই সাধারণ রোগ, কিন্তু রোগীর অবহেলা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য এই রোগ এক এক সময় মারাত্মক হয়ে যায়।




  •  আমাদের মধ্যে শতকরা 75 ভাগ মানুষ শুধুমাত্র খিদের অজুহাত দেখিয়ে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাদ্য পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। বর্তমানের ব্যস্ততার যুগে মানুষ প্রায় মেশিনে পরিবর্তিত হয়েছে। সবসময় কর্মব্যস্ততা, খাওয়ার বেলায়ও এর ব্যতিক্রম হয় না।


 


  • অধিকাংশের কাছে খাওয়াটা খাদ্যগ্রহণ নয়, উদরপূর্তি। তাড়াহুড়ো করে যা হোক কিছু গলাধঃকরণ করতে পারলে যেন তারা নিষ্কৃতি পায়। দুবেলা খাওয়াটা যেন তাদের কাছে একটা বাড়তি ঝামেলা।




  • সুতরাং এই ঝামেলা নিষ্পত্তির জন্য তারা যা হোক কিছু কোনরকমে গলাধঃকরণ করে কাজে বেরিয়ে পড়েন। এটা খুবই দুঃখের কথা এবং নিঃসন্দেহে একটা বাজে অভ্যাস। সব সময় ই খুব ধীরেসুস্থে চিবিয়ে চিবিয়ে মনোযোগ সহকারে খাওয়া উচিত।




  •  খাওয়ার পরই পেট ভরে জল খাওয়া ঠিক নয়, এতে পাচকরস পাতলা হয়ে পাচন ক্রিয়া আর ব্যাঘাত ঘটে। খুব প্রয়োজন না হলে এ সময় জল খাওয়াই ঠিক না। তবে প্রয়োজন হলে অবশ্যই জল খেতে হবে। বেশি জলে পাচকরস নষ্ট হয়ে পাচন ক্রিয়া দুর্বল হয়ে অজীর্ণ রোগ সৃষ্টি করতে পারে। পৃথিবীতে একমাত্র মানুষ ই খাবার সময় জলপান করে।
-:অজীর্ণ রোগ 6 প্রকার:-


  • 1. মলের সঙ্গে আস্ত খাবর ও শাকসবজি আসা এর সঙ্গে যদি আমাশয় নির্গত হয় তখন তাকে          মন্দাগ্নি বলে।
  • 2. পায়খানাতে যদি টক টক গন্ধ হয় তাহলে তাকে বিদগ্ধ বলে।
  •  3. যে অজীর্ণ সব সময় একই রকম থাকে তাকে প্রতি বাসর বলে।
  •  4. খাবার যখন ঠিকমতো হজম না হয়ে অন্ত্রে জমা হয় এবং পেট ফেঁপে ওঠে ব্যথা হয় তখন       তাকে বৃষ্টরণ্য বলে।
  • 5. খাওয়ার পর পাচন ক্রিয়া ঠিকমতো হয়না পাতলা পায়খানা হয় তখন তাকে রসশেষ বলে।
  • 6. খাওয়ার হজম হয়ে যায় ও পরের দিন দিনপাক বলে।
-:বিশেষ বিশেষ কারণ:-


  •  আমাদের অনেকেরই খাওয়ার সময় অসময় এর প্রতি গুরুত্ব কম। যেন খেতে হয় তাই খাওয়া যেন না খেলেই ভাল হয়। এর উপর আছে ব্যস্ততা, তাড়াহুড়ো করে খানিকটা খাবার অর্থাৎ ভাত বা রুটি পেটের মধ্যে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভরে দিই।  এটা পরিহার করা দরকার।

 


  • অন্য আর পাঁচটা কাজের মত খাওয়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, তা যত্ন সহকারে করা দরকার। আস্তে আস্তে চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে হবে, গিলে খাবার অভ্যাস থেকে অজীর্ণ হয়।অজীর্ণ রোগের আর একটা বড় কারন নেশা, কথায় বলে নেশা সর্বনাশা। মদ, তামাক, গাজা, এমনকি চা খেলে ও অজীর্ণ রোগ হতে পারে। অত্যাধিক শারীরিক বা মানসিক শ্রম যেমন ঠিক নয়, তেমন শ্রম হীন অলস জীবনও ঠিক নয়। এতে অজীর্ণ রোগের সৃষ্টি হতে পারে।




  •  অতিরিক্ত তেল, ঘি, মসলা দেওয়া খাবার, তেলে ভাজা খাবার, অস্বাস্থ্যকর স্যাঁতসেঁতে ঘরে বাস করা, নোংরা পরিবেশে থাকা বা কাজ করা ইত্যাদি থেকে অজীর্ণ রোগ হতে পারে। অজীর্ণ রোগ টা এমন একটা রোগ যার আড়ালে ডায়রিয়া, ডিসেন্ট্রি, কোলাইটিস, পেপটিক আলসার, গ্যাস্ট্রো ইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স, গ্যাস্ট্রাইটিস, গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার, ক্রনিক এপেন্ডিসাইটিস বা কোলনের ক্যান্সার, ডিওডেনাল আলসার, প্যানক্রিয়াস এর রোগ, গলব্লাডারের রোগ ইত্যাদি ব্যাধি লুকিয়ে থাকে।
 


  • সুতরাং উপরোক্ত ক্ষেত্রে অজীর্ণ হতে পারে। তাছাড়া পাচকরস বা এনজাইমে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড কম বা বেশি বের হলে অথবা গ্যাস্ট্রিক জুসে যে এনজাইম থাকে তার গুণগত তারতম্য হলে অজীর্ণ হতে পারে। এগুলো ছাড়া কিছু কিছু অন্য কারনেও অজীর্ণ রোগ হতে পারে।
 



  • অনেকে খাওয়ার পর খুব টাইট করে ধুতি পরেন বা চেপে বেল্ট লাগিয়ে প্যান্ট পরেন। এটা ভালো অভ্যাস নয়, এতে পাচন ক্রিয়ার উপর খারাপ প্রভাব পড়ে। শরীরে যদি রক্তের অভাবে ঘটে তাহলে ও অজীর্ণ রোগ হতে পারে। এছাড়া স্নায়ুবিক দুর্বলতা, পাকস্থলীর এলার্জি, যকৃতের রোগ, গর্ভাশয় এর রোগ, কিছু কিছু জ্বর, কিছু কিছু সংক্রামক রোগ, পাকস্থলীতে পিত্ত জমা, পাকস্থলী দুর্বল হয়ে ঝুলে পড়া, অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়া ইত্যাদি কারণে অজীর্ণ হতে পারে।



  •  তাছাড়া অত্যাধিক চিন্তা, উত্তেজনা, উদ্বেগ, ভয় বা শোক দুঃখ থেকেও এসিডিটি হতে পারে। অনেক সময় বাসি পচা খাবার ফেলে দেওয়া হয়। কিছু মানুষ খাবার নষ্ট করা অথবা ফেলে দেওয়া অন্যায় বা পাপ মনে করে খেয়ে নেন। এতে উপরওয়ালার ঘরে কতটা পূর্ণ হয় জানিনা, তবে শরীরের ঘরে অনেকটাই পাপ হয়। এগুলো শরীরের পক্ষে অত্যন্ত খারাপ।

  •  খাওয়ার সময় অত্যধিক ঠান্ডা, গরম জল কিংবা বরফ দেওয়া জল পান করাও ঠিক নয়, এর থেকেও অজীর্ণ হতে পারে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে আমরা যদি খাওয়া-দাওয়ার প্রতি একটু যত্নবান হই, তাহলে এই অজীর্ণ রোগকে অনেকটাই দূরে রাখতে পারি।
-: বিশেষ বিশেষ লক্ষণ লক্ষণ :-
  • 1. প্রথমে বলা যেতে পারে খিদে না লাগা। 
  • 2. অসুস্থতা জনিত কারণে, বারবার পেটে হাত বুলানো।
  • 3. টক ঢেকুর ওঠা, বুক জ্বালা, মাথা ঘোরা, গা গোলানো।
  • 4. পেট ফাঁপা, পেটে ব্যথা হওয়া, বার বার থুথু ফেলা।
  • 5. অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠা।
  • 6. সবসময় ক্লান্তি অনুভব করা।
  • 7. জিভে ময়লার স্তর পড়া।
  • 8. মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।



  • এই রোগ যদি পুরানো হয়ে যায় তাহলে তা স্নায়বিক দুর্বলতা পরিবর্তিত হয়, এবং জটিল রূপ ধারণ করে। এই রোগ যদি আরো বেশি জটিল হয়ে পড়ে, তাহলে এর থেকে বমি, মূর্ছা, প্রলাপ, গায়ে ব্যথা, চিত্তভ্রম ইত্যাদি রোগের জন্ম হয়। যদি রোগী এইসব রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে, এবং সঠিক সময়ে তার চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। অজীর্ণ রোগ হলে পুরো মাত্রায় খাওয়া উচিত নয়। অধিক ভোজন অত্যন্ত ক্ষতিকারক।


  •  অনেকসময় অজীর্ণ রোগ থাকা সত্ত্বেও, রোগীর অত্যাধিক খিদে পায়, একে দূষিত খিদে বলে। এর থেকে অন্য অনেক মারণ রোগের জন্ম হয়। রোগীর খাবার দিকে দৃষ্টিপাত করা উচিত। খাওয়ার পর মুহূর্তেই যদি রোগীর পেট ফুলে যায়, বমি হয়, মুখে পিত্ত আসে, শরীর ম্যাজম্যাজ করে, তাহলে সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। এই সমস্ত কারণ থেকে রোগীর রোগ নির্ধারণ করা খুব কঠিন কাজ নয়। আর এর চিকিৎসাও অসাধ্য নয়। তবে সঠিক সময়ে সঠিক রোগ নির্ণয় না করতে পারলে, চিকিৎসায় দেরি হলে, রোগ ভয়াবহ আকার নিতে পারে। তাই সময় থেকে এর চিকিৎসা করা দরকার।

-: অজীর্ণ রোগের প্রকারভেদ:
  • 1. তরুণ অজীর্ণ রোগ।    ( শতকরা 30 শতাংশ)
  • 2. পুরাতন অজীর্ণ রোগ। ( শতকরা 70 শতাংশ) 



  • যখন হঠাৎ এই রোগের আক্রমণ হয় লক্ষণ দেখা যায়, তখন তাকে তরুণ অজীর্ণ রোগ বলা হয়। এটা সাধারণত খাবারের গোলমালে হয়। এক্ষেত্রে অজীর্ণ নিরোধক বা অজীর্ণ নিবারক কিছু ঔষধ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করলে, রোগটি সেরে যায়। আর পুরাতন অজীর্ণ রোগ দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে।



  •  বয়স্কদের এই রোগ বেশি হয়। রুগ্ন শরীরের জন্যও এমনটা হতে পারে। উপরে যে লক্ষণগুলোর কথা বলা হয়েছে তার সবই পুরাতন অজীর্ণ রোগের লক্ষণ। এক্ষেত্রে রোগের মূল কারণ খুঁজে সেইমতো চিকিৎসা করা দরকার। সাধারণ হজমের ওষুধ খেলে তখনই হয়তো কিছুটা আরাম হবে। কিন্তু যেহেতু এটি তরুণ অজীর্ণ রোগ নয় তাই সমূলে বিনাশ হবে না, পরে আবার হবে।


  •  এজন্য প্রথম রোগীর সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলে, রোগীর শরীর পরীক্ষা করে যদি রোগের মূল কারণ ধরা না যায়,


  • তাহলে প্রস্রাব, মল ও রক্ত পরীক্ষা করে কি সমস্যা দেখে চিকিৎসা করা দরকার। সময় মত আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই রোগ থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া সম্ভব।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ