Ad Code

Responsive Advertisement

অরুচি রোগ

-:রোগ সম্পর্কে আলোচনা:-







না খাওয়ার ইচ্ছে হলো অরুচি। বেশ কিছুদিন ধরে এটা চলতে থাকলে একে বলে অরুচি রোগ। এই অবস্থায় খিদে থাকে না তাই একে ক্ষুধামন্দাও বলে। 



সাধারণত যারা খাওয়া দাওয়ার প্রতি যত্ন নেন না, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে অখাদ্য কুখাদ্য ভোজন করেন, এই রোগ তাদেরই বেশি হতে দেখা যায়।

 


এভাবে যদি পাকস্থলীর মধ্যে কোন পরিবর্তন এসে যায় তখন তাকে বলে মায়াস্থেনিয়া এবং এই অরুচি রোগ যদি আরো জটিল হয়ে যায় তাহলে তা এটোনি পর্যায়ে চলে যায়।
এমন অবস্থায় পাকস্থলী খুবই দুর্বল ক্ষীণ ও শিথিল হয়ে পড়ে। এমনকি ঐ অবস্থায় কারো কারো মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।




 তাহলে দেখা যাচ্ছে অরুচি আপাতদৃষ্টিতে খুব পীড়াদায়ক ও জটিল রোগ না হওয়া সত্ত্বেও উপযুক্ত সময় ব্যবস্থা না নিলে তা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। এতে পাকস্থলী প্রসারিত ও স্ফীত হতে পারে, এই লক্ষণ থাকলে সত্বর চিকিৎসা শুরু করা দরকার।


-: বিশেষ বিশেষ কারণ:-






দীর্ঘ অরুচির ফলে পাকস্থলীতে গোলযোগ সৃষ্টি হয়। পাকস্থলীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত শারীরিক যন্ত্রাদিতেও ছোট বড় বিভ্রাট শুরু হয়ে যায়। পাকস্থলীর কাজ এবং সেই সঙ্গে অন্ত্রের সক্রিয়তা কমে বা বন্ধ হয়ে যাবার পরই পাচন ক্রিয়া বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে।



সাধারণত এ ধরনের অসুবিধার কথা যারা বলেন, তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে দেখা যায়। অনেক সময় অত্যধিক ভয়, চিন্তা, ক্রোধ ইত্যাদি থেকে এ ধরনের রোগ হতে দেখা গেছে। আবার অন্য কিছু রোগের, যেমন নিউমোনিয়া, ম্যালেরিয়া, সর্দি জ্বর, আন্ত্রিক জ্বর, বসন্ত, পাকাশয়ে ঘা, পাকস্থলীর প্রদাহ, সুনিদ্রার অভাব, হিস্টিরিয়া ইত্যাদি থেকেও অরুচি হতে পারে।

 মায়াস্থেনিয়া হলে খাওয়ার ইচ্ছা একেবারেই চলে যায়। এছাড়া পেট ভার ভার লাগে, ঠিক সময় খিদে পায় না। পেটে বায়ু জমে, পেটে সামান্য জ্বালা বোধ হয়, চোঁয়া ঢেকুর ওঠে, পেট গুড়গুড় করে, গা বমি বমি করে, জোর করে খেলে পেট খারাপ হয়, মুখে জলও আসে কখনো কখনো, বার বার থুথু ফেলতে চায় রোগী। মনে হয় যে কোন সময় বমি হয়ে যাবে। এই অবস্থাতে যথাসময়ে চিকিৎসা শুরু না করলে বা সামান্য ব্যাপার বলে গুরুত্ব না দিলে পাকস্থলীর স্ফীত হয়ে পড়ে। তখন আর অবস্থাটা খুব সামান্য বা সাধারন থাকেনা।


-:বিশেষ বিশেষ লক্ষণ:-



1. ভীষণ বায়ু বিকার দেখা যায়।
2. কিছু না খেয়েও অম্ল ঢেকুর ওঠে।
3. পেটটা ভারী ভারী মনে হয়।


4. রোগী মাঝে মাঝে নিজের পেটে হাত বুলায়।
5. মুখের সাদ পাল্টে কেমন তেতো তেতো হয়ে যায়।
6. এতে রোগী দিনে দিনে ক্ষীণ দুর্বল হতাশ হয়ে পড়তে থাকে।



7.
আর যেহেতু খাওয়া-দাওয়ার খুবই অনিয়ম ও পরিমাণ কমে যায় ,সেহেতু তার শরীরের মাংস, রক্ত, মজ্জা ইত্যাদিও অপুষ্টিতে ভুগতে শুরু করে।



8. যার ফলশ্রুতিতে দ্রুত রোগীর ওজন কমে যেতে শুরু করে । এরকম অবস্থার সৃষ্টি হলে চিকিৎসকেরা      তাকে গ্যাস্ট্রিক এটনি বলে।
9. পেট শক্ত হয়ে যাওয়া।
10. শক্ত খাবার যা কিছু খায় তা গিয়ে পেটে জমতে শুরু করে।
11. নিয়মিত প্রয়োজনীয় পরিমাণে মল বেরোতে পারে না।
12. নড়াচড়া করলে পেটে হাত বুলালে মনে হয় পেটের মধ্যে যেন খাবারগুলো নড়ে চড়ে বেড়াচ্ছে।


এরমধ্যে যদি আবার পাকস্থলী বৃদ্ধি ও স্ফীত হয় তাহলে রোগীর অপারেশন করার প্রয়োজন হতে পারে। রোগীর পেটের ভিতর টিউব ঢুকিয়ে যদি ভেতরের অজীর্ণ পদার্থ বের করা যায়, তাহলে তার থেকে ভীষণ পচা গন্ধ আসে। ওই বর্জ্যের রং হয় হলুদ, সবুজ অথবা নীলচে।




রোগীর চোখ মুখ ফ্যাকাশে হলুদ দেখায় রোগী নিস্তেজ হয়ে পড়ে। রোগীর এই অবস্থাটা অত্যন্ত বিপদজনক এমনকি প্রাণ সংশয় এর আশঙ্কা থাকে। রোগীর শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়, বিশেষ করে রোগীর চোখ এ সময় নীল নীল মনে হয়। নাড়ির গতি হয়ে পড়ে কখনো খুব দ্রুত কখনো ক্ষীণ। কখনো এত ক্ষীণ যে নাড়ি পাওয়াই মুশকিল হয়ে পড়ে।




এমতাবস্থায় একজন চিকিৎসককে রোগীর রোগ ধরতে হিমসিম খেতে হয়। কখনো কখনো চিকিৎসক চিকিৎসা শুরু করার আগেই রোগীর প্রাণ বায়ু বেরিয়ে যায়। অনেক সময় অজীর্ণ থেকে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। অবশ্য রোগীর এই জীর্ণাবস্থাটা অনেকদিন ধরে চলতে থাকলে রোগী বেশ কিছুকাল ধরে ভুগতে ভুগতে একসময় মৃত্যুমুখে পতিত হয়।




আমরা আগেই বলেছি এই রোগ কিন্তু জটিল নয়, অসাধ্য নয় কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চলতে চলতে একসময় অসামান্য ও দুঃসাধ্য হবে। তাই পেটে মল জমতে শুরু করার আগেই সুচিকিৎসা দরকার, যাতে দূষিত মল বেরিয়ে যায় ও পরে আর পেটে মল জমতে না পারে। অরুচি রোগটা হলো পাচন অঙ্গের ধর্মঘট। সুতরাং এটাকে কোনভাবেই অবহেলা করা উচিত নয়। রোগকে অবহেলা না করে যথাসময়ে চিকিৎসা শুরু করলে রোগী নিশ্চিতভাবে সুস্থ হয়ে উঠবে।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ