Ad Code

Responsive Advertisement

দাদ রোগ (Ringworm or Tinea)

-:রোগ সম্পর্কে বিশ্লেষণ:-



 এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ, একজন থেকে নানা কারণে সংক্রমিত হয়ে অন্য জনের হতে পারে। রোগটি হলো ডার্মাটোফাইট ছত্রাক দ্বারা সুপেরফিশিয়াল স্কিন ইনফেকশন। এককথায় এটি ছত্রাক ঘটিত রোগ। মাইক্রোস্পোরাম, ট্রাইকোফাইটন ইত্যাদি পরিবারভুক্ত ছত্রাক এই রোগের কারণ। 



রোগটি সাধারণত দেহের যেসব জায়গায় হয় সেখানে অত্যধিক ঘাম জমে বা ঘন চুল থাকে। রোগটি বিশেষ করে হয় মাথার তালুতে, চামড়ায়, জংঘাতে, ঘাড়ে, দাড়িতে, লিঙ্গে, অন্ডকোষে, পায়ে এবং কুঁচকিতে। রোগটি সংক্রমণজনক হলেও সর্বত্রই যে মানুষের দেহে এই রোগ একি জীবাণুর সংক্রমণে হয় তা নয়। 

এটি আলাদা আলাদা জলবায়ু, খাওয়া-দাওয়া, বসবাস ইত্যাদি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। এই রোগের ফাঙ্গাস বা ছত্রাক দ্বারা মুখ্যত চর্মের মৃত টিস্যু বা একেবারে উপরিভাগের অংশ, নখ, চুল ইত্যাদি আক্রান্ত হয়ে প্রদাহ হয় এবং দেহের নানা স্থানে ক্রমবর্ধমান চাকা চাকা দাগ হয়ে চুলকানি, রস পড়া ও ক্ষতের সৃষ্টি হয়।


  দেহে অবস্থানভেদে দাদের শ্রেণীবিভাগ করা হয় এবং সেগুলির নামকরণ হয় ভিন্ন ভিন্ন। যেমন মাথার দাদ বা টিনিয়া ক্যাপিটিস, দেহের দাদ বা টিনিয়া করপোরিস, কুচকির দাদ বা টিনিয়া ক্রুরিস, দাড়ির দাদ বা টিনিয়া বার্বি, পদতলের বা পায়ের চেটো দাদ বা টিনিয়া পেটিস, নখের দাদ বা টিনিয়া আঙ্গুইয়াম ইত্যাদি।

 -:বিশেষ বিশেষ কারণ:-


 সবাই জানেন এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ। একজন থেকে অন্যজনে সংক্রমিত হতে পারে। রোগ বেশি হয় যেখানে খুব ঘাম হয় বা যে জায়গাটা ঘন চুলে আচ্ছাদিত থাকে সেখানে। ছোটদের হাত, মাথায় বেশি হতে দেখা যায়। বড়দের মাথাতে এই ধরনের দাদ খুব কম হয়। সঠিক কারণ হিসাবে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা সম্ভব নয় তবে 60% রোগ অন্য কারো বা কোনো পশুর দেহ থেকে সংক্রামিত হয়।



 একজন রোগগ্রস্থের গামছা, তোয়ালে, চটি, রেজার, ব্লেড, ক্ষুর ইত্যাদি থেকেও রোগ অন্যের দেহে ছড়াতে পারে। এগুলো সাধারণত মাইক্রোফোরাম জীবাণুর মাধ্যমে হয়। এই জীবাণু গুলো চুল ঢাকা জায়গায় বেশি আক্রমণ করে। এর সংক্রমণ বেশি হয় মাথায়। এই জীবাণু ওই জায়গায় গভীরে পৌঁছে চুলের মূল খেয়ে ফেলে ফলে চুল ঝরে যেতে থাকে।
 

মাথায় চাকা চাকা দাদ বেরোতে শুরু করে। আগেই বলেছি এ ধরনের দাদ তুলনায় কম দেখা যায়। দার্জিলিং, শিলং ইত্যাদি পাহাড়ি জায়গায় ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মাথায় এ ধরনের দাদ বেশি হতে দেখা যায়। কিছু কিছু দাদ হয় হাতের বা পায়ের নখের মধ্যে। এগুলি খুবই বিরক্তিকর এবং কষ্টদায়ক সারতেও অনেক সময় লাগে।

 দাদ যেমনি হোক আর যত ছোটই হোক তা সারতে খুব কম করেও দুই থেকে তিন সপ্তাহ মতো সময় লাগে। অনেকেরই একটা ভুল ধারনা থাকে পাঁচ - সাত দিনের ওষুধে একটু কমেছে দেখে, ভালো হয়েছে ধারণা করে নিয়ে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেয়। এতে ফল ভাল হয় না, রোগ আবার রিলাপ্স করে। এমনকি ভবিষ্যতে এ রোগ আর সারতে চায় না। হাত পায়ে যে দাদ হয় তা অনেকটা একজিমার মত। এগুলি ফাঙ্গাস বা ছত্রাক থেকে হয়। আর দাড়িতে যে দাগ হয় তা বেশ কষ্টকর।


 আমরা আগেই বলেছি যে সমস্ত জায়গায় বিশেষ করে ঢাকা অংশে ঘাম জমে সেখানে ঘাম শুকিয়ে দাদ হয়। সাধারণত ওইসব ঢাকা অংশের ঘাম, ময়লা, নিয়মিত পরিষ্কার না করায় এই নোংরা থেকেই ফাংগাসের জন্ম হয়। আর ফাঙ্গাসই হল দাদের মূল কারণ। এই রোগ সাধারণত ছড়ায় দূষিত সংক্রামিত ব্রাশ, চিরুনি, তোয়ালে, টুপি ও অন্যান্য কাপড়চোপড় ব্যবহারের ফলে। 


এই রোগ বহু সদস্যযুক্ত যে কোন পরিবারের একজনের হলে দ্রুত অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। স্কুলে একটি বাচ্চার দাদ হলে আস্তে আস্তে তা অনেক ছাত্রের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। গরম আবহাওয়া, খাওয়া-দাওয়া, পরিবেশ, বসবাস ইত্যাদি থেকেও এ রোগের সম্ভাবনা থাকে। ভিজে জাংগিয়া, আন্ডার প্যান্ট বা অন্তর্বাস ইত্যাদি পরার জন্য দাদ হতে পারে। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের এই রোগ হওয়ার বিশেষ সুযোগ থাকে। তুলনায় মোটা লোকেদের দাদ বেশি হতে দেখা যায়।

 -:বিশেষ বিশেষ লক্ষণ:-


 একজিমার মত দাদ এমনই একটা রোগ যা চিনতে খুব একটা কষ্ট হয় না। রোগী নিজেও তা বুঝতে পারে, এর লক্ষন অত্যন্ত প্রকট। দাদ মটরদানার মতো থেকে শুরু করে বড় চাকতির মত হয়। আকারে এ গুলি হয় চক্রাকার বা ডিম্বাকার। দাদের জায়গা শোথযুক্ত হয়ে থাকে, ফলে এই রোগকে সহজেই চেনা যায়। তবে অধিকাংশ দাদ গোল হয়ে ওঠে, এর আকারের চারপাশে ছোট ছোট ফুসকুড়ি হয়। চুল ঢাকা অংশে বা চুলযুক্ত অংশে যখনই দাদ হয়, তখন সেখানকার চুল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং শুকিয়ে বা মরে গিয়ে ঝরে যেতে থাকে। 


মাথায় হলে সেখানকার চুল ঝরে গিয়ে টাক পড়ে যায়। যেখানে দাদ হয় সেখানে ভীষণ চুলকায়, চুলকাতে চুলকাতে মানুষ কাহিল হয়ে পড়ে। শরীরে দাদ শুরু হয় ছোট্ট একটা বিন্দুর মত আকারে, তারপর তা বাড়তে বাড়তে করতাল এর মত, কখনো কখনো তার চেয়েও বড় হয়ে যায়। দাদ রোগ একজন থেকে অন্যজনে সংক্রামিত হয়। 


একজন অন্যজনের সংস্পর্শে এলে অথবা একে অন্যের পোশাক পরলে এই রোগ সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। নখের ভেতরের দাদ হলে নখ সামান্য কুঁচকে যায়, নখ দেখতে কুৎসিত বা বিকৃত হয়ে যায়। নখে দাগ হলে তা অগ্রভাগ থেকে শুরু করে পশ্চাদ ভাগে চলে যায়। এতে চুলকানি তো হয়, সেইসঙ্গে দুর্গন্ধও হয়। হাত, পা অথবা পায়ের তলে যেসব দাদ হয়, তা অনেকটা একজিমার মত দৃষ্ট হয়।


 দাড়িতে দাদ হয় নাপিত এর মাধ্যমে। তারাই একজনের দাদ অন্যজনের শরীরে বহুব্যবহৃত ক্রিমের তুলি, কাঁচি, ব্লেড, ক্ষুর ইত্যাদির মাধ্যমে চালান করে দেয়। অর্থাৎ দাদ হয়েছে এমন কোন লোকের দাড়ি কামিয়ে সেই একই খুর দিয়ে অন্য একজনের দাড়ি কামালে এই রোগ সংক্রমিত হয়। এই দাদও ভীষণ চুলকায় ও গোল গোল চাকতির মত হয়। দাড়ি থেকে দাদ অনেক সময় নিচে গলা পর্যন্ত এবং তারপরে বুকের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। সঠিক সময়ে চিকিৎসায় অনেক ক্ষেত্রেই এই রোগ পুরোপুরি সেরে যায়।
















একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ