অর্শ বা পাইলস হচ্ছে অনোরেক্টাল ডিজিজ এর অন্তর্গত একটি রোগ। এই কষ্টদায়ক বিরক্তিকর রোগটি আমাদের দেশের সর্বত্র, স্ত্রী পুরুষের মধ্যে দেখা যায়। অবশ্য কেউ কেউ বলেন দক্ষিণ ভারতে বিশেষ করে চেন্নাইয়ে এই রোগটি একটু বেশি লক্ষ্য করা যায়। মলদ্বারের ভেতরের বা বাইরের শিরা ফুলে ওঠে ও সামান্য ছোট-বড় মাংসপিণ্ড উৎপন্ন হওয়া কে বলে অর্শ রোগ।
মলদ্বারের এই বর্ধিত সূত্রাবলী এগুলো দেখতে হয় মটরদানা অথবা ছোট ছোট আঙুরের থোকার মতো। বস্তুত এগুলো হলো ছোট ছোট গোল গোল দলা পাকানো মাংসপিণ্ড।এই বলি গুলো কখনো দু-একটা হয় কখনো বা আঙুরের থোকার মত হয়। মলদ্বারে এই বলি গুলোর অবস্থান এর উপর অর্শ বা পাইলস কে ভাগে ভাগ করা হয়।
অর্শকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় এক্সটার্নাল
পাইলস এবং ইন্টার্নাল পাইলস। মলদ্বারের বাইরে অর্থাৎ মলদ্বারের মুখের কাছে চর্ম ঝিল্লির সংযোগস্থলে জন্মালে তাকে বহিরবলি বলে। এই বহির বলি থেকে সাধারণত রক্তস্রাব হয় না। যে বলি মলদ্বারের ভেতরের দিকে ঝিল্লি দ্বারা আবৃত থাকে, সেগুলি হল অন্তরবলি। এর থেকে রক্ত স্রাব হয়।
আবার কারো কারো ভেতরের ও বাইরের উভয় স্থানে বলি হয় একে বলে মিশ্রিত পাইলস। তীব্র বেদনা হয়, রোগীর পক্ষে ওঠাবসা চলাফেরা করা মুশকিল হয়ে পড়ে। মলদ্বারের বাইরে ও ভেতরে শিরা ভুলে যাওয়ার জন্য রোগীকে ভীষণ কষ্ট ভোগ করতে হয়।
-: বিশেষ বিশেষ কারণ :-
রোগটি স্ত্রী পুরুষ নির্বিশেষে হলেও, তুলনায় পুরুষদের বেশি হয়। সম্ভবত পুরুষদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা অনেক বেশি ব্যস্ত, অনিয়ম হয় বলেই এমনটা হতে দেখা যায়। সেই সব মানুষের বেশি হতে দেখা যায়, যারা একি জায়গায় বসে দীর্ঘক্ষণ কাজ করে। অর্থাৎ চেয়ারে বা গদিতে দীর্ঘ সময় বসে বসে কাটান তাদের এ রোগ বেশি হয়।
অর্শের রোগীদের নিয়মিত কোষ্ঠকাঠিন্য থাকতে দেখা যায়। এছাড়া যকৃতের দোষ, অত্যধিক নেশা, পর্যাপ্ত পরিমাণে আহার না করা, খুব বেশি গরম মসলা যুক্ত বা ঝালযুক্ত খাবার এবং উত্তেজক খাবার গ্রহণের ফলে এই রোগ হতে পারে। যারা অধিক ভোগ-বিলাসের মধ্যে জীবন কাটায় তাদের মধ্যে এই রোগ অপেক্ষাকৃত বেশি হয়। অন্যান্য কারণের মধ্যে অহেতুক পেটের মধ্যে আটকে রাখা পায়খানা, পায়খানার বেগ আসা সত্বেও ব্যস্ততার কারণে বা অন্য কোন কারণে পায়খানা করতে না যাওয়া, বা মলত্যাগ না করা, অত্যধিক আচার খাওয়া সরষের তেল খাওয়া,
অত্যধিক মাছ মাংস খাওয়া, সময়-অসময় পায়খানার ট্যাবলেট বা ওষুধ খাওয়া, বেশি রাত করে শোয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য বিশেষ বিশেষ লক্ষণ। মলদ্বারের ভেতরে বা বাইরে কখনো দু-একটি বলি, কখনো আঙুরের থোকার মতো বলি দেখা যায়। বলি থেকে যখন তখন বিশেষ করে কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগীদের পায়খানার সময় অবশ্যই রক্তপাত হতে শুরু করে। জ্বালা হয়, ব্যথা করে, কখনও কখনও সুড়সুড় করে, কাটা গাঁথার মত অনুভূতি থাকে, বারবার মলত্যাগের ইচ্ছা হয়,
ক্ষুধা কমে যায়, শুরুতে ব্যথা হয়, দিনে দিনে রোগী দুর্বল হয়ে পড়তে থাকে, এ রোগ একবার হলে চটকরে থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। বিশেষ করে রক্তার্শতে রোগী অত্যন্ত কষ্ট পায়। নিয়মিত কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে, পায়খানা করতে হয়, কষ্ট করে পায়খানার সময় বা কখনো পায়খানার আগে প্রচন্ড ব্যথা হয় রক্ত পড়ে।
অন্যান্য সময়ে রক্ত পড়ে জামাকাপড় নোংরা হয়। স্বভাবতই এই রোগের রোগীরা রক্তাল্পতায় ভোগে। এভাবে শরীর থেকে নিয়মিত রক্ত চলে যাওয়ার জন্য রোগী দিনে দিনে দুর্বল হয়ে পড়ে, হলুদ বা ফ্যাকাসে হয়ে যেতে থাকে। অর্শ রোগীকে গ্যাসে ভুগতে দেখা যায়। পচা গ্যাসের গন্ধে রোগী নিজেও খুব অস্বস্তিতে থাকে।
এই রোগের রোগীদের গাঁটের ব্যথা বেদনা হয়। হজম শক্তি কিছুটা কমে যায়, খিদে কমে যায়, কেউ কেউ অরুচির শিকার হয়ে পড়েন। কখনো কখনো কিছুই তাদের খেতে ভাল লাগেনা। ওঠাবসার সময় হাড়ের সন্ধিক্ষণে কটকট করে শব্দ হয় যা বাইরে থেকেও শোনা যায়। পেটে গ্যাস থাকার জন্য রোগীর পেট ফাঁপা থাকে। এর রোগী নিয়মিত জোর করে খেলেও শরীর সারতে চায় না। এই রোগ শুরুতে বা কম অবস্থায় অনেক সময় ঔষধে সেরে যায়। খুব বাড়াবাড়ি হলে শল্য চিকিৎসকের মাধ্যমে তা অপারেশন করতে হয়।
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam links in message