Ad Code

Responsive Advertisement

গোদ রোগ (Filariasis)

-:রোগ সম্পর্কে বিশ্লেষণ:-


 এই রোগ এক ধরনের সুতা কৃমির মত কৃমির আক্রমণে হয়। ফিলারিওইডা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত কতগুলি নেমাটোর্ড ওয়ার্মস দ্বারা এই রোগ হয়। এই রোগ বিশেষত ডাবলু ব্যাংক্রফটি ও বি মালায়ী জনিত বেশি হতে দেখা যায়। এর মধ্যে বিপদজনক হলো ডাবলু ব্যাংক্রফটি। আমাদের দেশে ডাবলু ব্যাংক্রফটি থেকে বেশি ফাইলেরিয়া হয়। এ ধরনের ইনফেকশন সংক্রমণ হয় মানুষের মধ্যে আর বি মালায়ী এর সংক্রমণ হয় পশুদের মধ্যে। অবশ্য কিছু কিছু মানুষের মধ্যেও এই সংক্রমণ হতে দেখা গেছে। তুলনামূলকভাবে রোগটি ভারতের সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল, পূর্বাঞ্চলে বেশি হতে দেখা যায়।




 বিভিন্ন জাতের মশার কামড় থেকে এই রোগটি মানুষের মধ্যে ছড়ায়। ডাবলু ব্যাংক্রফটি ইনফেকশন ছড়ায় কিউলেক্স ফ্যাটিগ্যান্স অ্যানোফিলিস ও এডিস মশা থেকে, আর বি মালায়ী ছড়ায় প্রধানত অ্যানোফিলিস মশা থেকে। এ ধরনের কীটের আক্রমণ পায়ে বেশি হয়। এই রোগে কখনো একটি পা কখনো বা দুটি পা-ই ফুলে হাতির মতো হয়ে যায়। একে গ্রামাঞ্চলে গোদ বলে।


 সময়মতো চিকিৎসা না হলে রোগ প্রায় আজীবন থেকে যায়। নিঃসন্দেহে এটি একটি কষ্টদায়ক রোগ। এই রোগের জীবাণু 2.5 এম এম থেকে 4.5 এম এম পর্যন্ত লম্বা পাতলা সুতোর মতো হয়। কখনো কখনো এদের এর চেয়েও লম্বা প্রায় তিন থেকে চার হাত হতেও দেখা যায়। রক্ত পরীক্ষা করেই এই রোগের জীবাণুর উপস্থিতি জানা যায়। এই কৃমি যারা রাতে জেগে দিনে ঘুমায় তাদের শরীরে দিনে এবং যারা দিনে জেগে রাতে ঘুমায় তাদের শরীরে রাতে উপদ্রব করে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাতের দিকে এরা রক্তের মধ্যে ভ্রমণ করে। 



এজন্য রক্ত রাত্রে নিয়ে পরীক্ষা করতে হয়। মোটামুটি রাত বারোটার পর রোগীর রক্ত নেয়া হয়। পূর্ণবয়স্ক কৃমি লসিকা বাহিনীতে গিয়ে ডিম পাড়ে, সেখান থেকে রক্ত গিয়ে মেশে। প্রধানত গরমের দেশে এই রোগ বেশি হয়।

 -: বিশেষ বিশেষ কারণ :-


আগেই বলেছি এই রোগ হয় মশার কারণে। কোথাও এই রোগ প্রায় মহামারির মতো হতে শুরু করে। সাধারণত পুরুষ মশার কামড়ে এই রোগ হয়। এই পুরুষ মশা কামড়ে রক্তচোষার সময় তাদের ডিম চলে যায় রক্তের মধ্যে। তারপর ম্যালেরিয়ার মতো ডিমের জীবনচক্র চলে রক্তের মধ্যে ।

-:বিশেষ বিশেষ লক্ষণ:-



 সাধারণত পায়ের উপর তলের রঙ হয়ে যায় ঘন। ধীরে ধীরে পা ফুলে দ্বিগুণ বা কখনো কখনো তিন গুণ পর্যন্ত হয়ে যায়। লসিকা বাহিনীতে প্রদাহ হওয়ার জন্য বেশ কয়েক জায়গায় ফুলে উঠতে দেখা যায়। যেখানে সংক্রমণ হয় শেখান  থেকে কখনো কখনো দুধের মত সাদা রস বের হয়। এই রোগ অন্ডকোষেও হয়, অন্ডকোষে ফুলতে ফুলতে বীভৎস আকার ধারন করে এবং খুবই কষ্টদায়ক অবস্থার সৃষ্টি হয়।



 রোগী হাঁটাচলা করতে পারে না। এই রোগের আক্রমণ বারবার হয়। সাধারণত খোলা জায়গায়  চাপ দিলে  তা বসে যায় কিন্তু এই রোগে ফলে তা বসেনা বা দেবে যায় না। কখনো কখনো পেটের নিচের অংশ বা তলপেট, হাত, কান ইত্যাদি জায়গাতেও হতে দেখা যায়। প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে শীত করে, জ্বর আসে, সেই জ্বর 3 থেকে 5 দিন পর্যন্ত থাকে। জ্বরের মধ্যে রোগী আলস্য আসে, কখনো বমি হয়, পরে ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যায়। রোগীর অধিকাংশ লক্ষণ ম্যালেরিয়ার মত দেখায়। কখনো সেপটিক জ্বরের মত লক্ষণ দৃষ্ট হয়।

 

অণ্ডকোষে হলে যৌনাঙ্গ প্রায় লুপ্ত হয়ে যায়, সহজে দেখাই যায় না। উদরের লসিকা বাহিনীতে এই রোগের প্রকোপ হওয়া অত্যন্ত বিপদজনক, পেটে ব্যথা হয়, অনেক সময় রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হয়। অনেক সময় রোগগ্রস্থ জায়গায় চুলকানি ও খোস পাঁচড়া হয়। যতক্ষণ কৃমি বেঁচে থাকে ততক্ষণ ততটা বেশি শোথ হয় না, কিন্তু কৃমি মরে যাওয়ার পর শোথ বাড়তে থাকে।



 এই রোগের বিশেষ কারণ হলো লসিকা বাহিনীতে অবরোধ হয়ে যাওয়া। এ রোগে তিন ধরনের লক্ষণ বিশেষভাবে দৃষ্ট হয়। প্রথমতঃ ফাইলেরিয়া শরীরকে আক্রমণ করে কিন্তু কোনো লক্ষণ দৃষ্ট হয় না। দ্বিতীয়তঃ রোগীদের মধ্যে প্রায়ই আর্থ্রাইটিস, সন্ধিপদ, মাথাব্যথা, জ্বর আলস্য, হাত-পায়ে টান ধরা ইত্যাদি অসুবিধা দেখা যায়। আর তৃতীয়তঃ এ ধরনের রোগীর 14 - 15 দিন অন্তর, কখনো মাসে একবার করে, কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। শরীরের কয়েক জায়গায় শোথ বা মাংসবৃদ্ধি ইত্যাদি হতে দেখা যায়। ফাইলেরিয়াতে ট্রপিক্যাল এওসিনোফিলিয়ার বৃদ্ধি হতে দেখা যায়। এই রোগ সময় মত চিকিৎসা করলে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকে।


















একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ