Ad Code

Responsive Advertisement

আমবাত ( Urticaria )

  -: রোগ সম্পর্কে বিশ্লেষণ :-



 আর্টিকেরিয়া বা আমবাত হচ্ছে ত্বক বা চামড়ার এক ধরনের ইনফ্লামেটরি প্রতিক্রিয়া যুক্ত একিউট বা ক্রনিক রোগ। যাতে স্থানীয়ভাবে ত্বকের উপর লাল লাল চাকা চাকা এক টাকার কয়েনের মতো চাকতি বা দাগ হয়। এলার্জিজনিত প্রতিক্রিয়ার ফলে এমনটা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে রক্তস্রোতের মধ্যে হিস্টামিন ও অন্যান্য পদার্থ প্রবেশ করে স্থানীয় ক্যাপিলারি প্রসারিত করে, ফলে ক্যাপিলারি থেকে রক্ত বের হয়ে টিস্যুর মধ্যে জমে এবং এর বহিঃপ্রকাশ হিসেবে গায়ে চুলকানি হয়।




 এক্ষেত্রে আশেপাশের ক্ষুদ্র শিরা, ধমনী নালীগুলো ফুলে উঠতে পারে। নার্ভের প্রান্তভাগে উত্তেজনা ঘটলেও চুলকানির সৃষ্টি হয়। আমবাত এর সঠিক কারণ আজও গবেষকরা খুজে বের করতে পারেননি। আমবাত বেশ কিছু দিন বা কয়েক মাস পর্যন্ত চলে তা অন্যান্য রোগের মতই ক্রনিক হয়ে পড়ে। তবে ক্রনিক আমবাত এলার্জি ধাতের হতে পারে, আবার নাও হতে পারে।

-: বিশেষ বিশেষ কারণ :-



 এই রোগের সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক তো আছেই এমনকি পাচন ক্রিয়া র বিকৃতির সঙ্গেও এর সরাসরি সম্পর্ক আছে। দীর্ঘ দিন ধরে ওষুধ খাওয়া থেকে, কৃমি থেকে, কিছু কিছু খাবার থেকে, মৌমাছি বা বোলতা দংশন থেকে, এমনকি পোশাক-পরিচ্ছদ থেকেও এলার্জি ঘটিত আমবাত হতে পারে। ঠান্ডা লেগে অথবা পিত্ত বের হতে না পারার জন্যও এই রোগ হতে পারে।

 



এলার্জি জনিত কারনেও প্রতিক্রিয়া হলে এটি দেখা যায়। কারন কোন প্রোটিন বা সিরাম ডিসেনসিটাইজিং ইঞ্জেকশন, উগ্র আবহাওয়া ইত্যাদি নানা কারণে একিউট আমবাত হতে দেখা যায়। অনেক সময় কতকগুলি ভাইরাল ইনফেকশনের সঙ্গে অথবা কতকগুলি ভাইরাল ইনফেকশনের প্রাথমিক চিহ্ন হিসাবে আমবাতের আত্মপ্রকাশ ঘটতে পারে। 




এগুলোর মধ্যে গ্লান্ডুলার ফিভার, জার্মান মিজিলস, হেপাটাইটিস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। আবার কিছু কিছু আমবাতের কোন কারণই খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার বিশেষ কোন সেন্ট, জামাকাপড়, ক্রিম, পাউডার, সাবান ইত্যাদির ব্যবহার থেকে  অনেকের অ্যালার্জি ঘটিত আমবাত হতে দেখা যায়।  কুইনাইন ইত্যাদি ওষুধ বেশি খেলে কারো কারো হতে দেখা যায়।

-: বিশেষ বিশেষ লক্ষণ :-



এটি একটি অত্যন্ত বিরক্তিকর রোগ, একবার হলে এ রোগ চট করে পিছন ছাড়তে চায়না। এই রোগে মুখে বা গায়ে হঠাৎ করে লাল চাকা চাকা দাগ উঠতে শুরু করে দেয়।  চুলকায়, যত চুলকায় চামড়ার উপর চাকা চাকা দাগ বের হতে শুরু করে।

অনেক সময় কপাল বা কানের কাছে ফুলে যায়। কখনো কখনো রোগীর বমি হয়, জ্বর এসে যায়। এ রোগ কারো মাসে একবার হয়, কারো প্রতি সপ্তাহে এক দুবার করে হয়, কারো বা দু'একবার হয়ে জীবনে আর কখনো হয়না। 




কখনো কখনো চাকা দাগ গুলি কয়েকটি একসঙ্গে জুড়ে গিয়ে বড় চাকার মতো দেখায়, এগুলি কখনো ঘন্টা কয়েক থাকে আবার কখনো 21 দিন থেকে মিলিয়ে যায়। রোগটি খুব সহজসাধ্য রোগ, তবে ঠিকমতো চিকিৎসা না করা হলে এবং দীর্ঘ সময় থাকলে ভীষণ বিরক্তিকর সমস্যা সৃষ্টি হয় এবং পরে খুবই জটিল অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।




 লক্ষণ অনুসারে আমবাত কে বেশ কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। 

1 প্যাপুলোসা 
2 ফুগাক্স
3 পার্সটান্স
4 বুলোসা 
5 পিগমেন্টোসা
6 জাইগ্যান্টিয়া বা জায়ান্ট আর্টিকেরিয়া




প্যাপুলোসা
এই ধরনের আমবাত মুদ্রা বা পয়সার মতো গোল চাকা চাকা হয়ে বের হয়। এগুলো সাধারণত বুক, পিঠ ও পাছাতে বের হতে দেখা যায়। কিছু সময় পরে এগুলি মিলিয়ে গেলেও ছোট ছোট ফোসকা থেকে যায়, তাতে কালো কালো মামড়ি থাকে। অনেকটা জলবসন্তের মত দেখায়। শিশুদের এই টাইপের আমবাত বেশি হতে দেখা যায়। রাতের দিকে হয়, দিনে মিলিয়ে যায়, ভীষণ চুলকায় শিশু ঘুমাতে পারে না। এ ধরনের আমবাত শীতের চেয়ে গরমের সময় বেশি হয়। অনেক সময় মৌমাছি, বোলতা, ঐরকম বিষাক্ত কিছু পোকা-মাকড়ের কামড়ে ওই ধরনের আমবাত হতে পারে।




ফুগাক্স
এই ধরনের আমবাতও মুদ্রার মত চাকা চাকা বের হয় এবং কিছু সময় পরে মিলিয়ে যায়। তবে প্যাপুলোসা র মতো কোন ফোসকা বা দাগ থাকে না।

পার্সটান্স
এই ধরনের আমবাত খুব জেদি প্রকৃতির, কিছুতেই শরীর থেকে যেতে চায় না, কখনো বাড়ে, কখনো কমে।






বুলোসা
এই ধরনের আমবাতে হঠাৎ মুদ্রার মতো চাকা চাকা গোটা গায়ে বের হয়, তাতে রস যুক্ত ফোস্কা হয়। এটা অনেক সময় পুঁজযুক্ত হয়, শিশুদের এই ধরনের আমবাত বেশি হয়।

পিগমেন্টোসা
এই ধরনের আমবাত খুব কম হয়, দু-একটি ক্ষেত্রে শিশুদের হয়। সারা গায়ে দু-চারটির বেশি হয় না, ছোট বা বড় আকারে এগুলি পরে ফোসকা হয়ে প্রদাহ হয়, রক্ত জমে, ক্ষত সেরে গেলেও কালো কালো দাগ থেকে যায়। চট করে ছাড়তে চায়না। শিশুকাল থেকে শুরু হয়ে কিশোর পর্যন্ত বেরোয়াক, তারপর ধীরে ধীরে এর প্রকোপ কমে আসে।




জাইগ্যান্টিয়া
এগুলি অন্যান্য আমবাত এর চেয়ে বেশি এবং বড় হয় বলেই অনেকে এই টাইপ কে আসলে জাইগ্যান্টিয়া বলে। আমবাত যদি ক্রনিক না হয় তাহলে প্রায়শই আপনা থেকে সেরে যায়।
 কোন ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হয় না।

 



এসব ক্ষেত্রে রোগীর সঙ্গে কথা বলে বিশেষ কারণ অর্থাৎ এর মুলে কোন খাদ্য, ঔষধ বা অন্য কিছু আছে কিনা তা জেনে নিতে হয়। বলাবাহুল্য রোগীকে সেইসব খাবার বা ঔষধ সেবন থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়া উচিত। শুরুতে চিকিৎসা শুরু করলে এ রোগ খুবই সহজসাধ্য হয়, অবহেলা করলে রোগটি পরে অনেক ভোগায়। তাই অবহেলা না করে যথাসময়ে চিকিৎসা শুরু করা উচিত।























একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ