-:রোগ সম্পর্কে বিশ্লেষণ:-
যেমন দীর্ঘ সময় বসে কাজ করা, লেখাপড়ার কাজে ব্যস্ত থাকা, ঘন্টার পর ঘন্টা চেয়ারে বসে কাজ করা, ভোগবিলাসে জীবন ব্যতীত করা, দীর্ঘসময় মানসিক চিন্তা ও উদ্বেগ, আতঙ্কের মধ্যে থাকা, ব্যস্ততার কারণে মলের বেগ আটকানোর চেষ্টা করা, পায়খানা পেলেও ঠান্ডা শীতের ভয়ে বা অন্য কারণে মলত্যাগ করতে না যাওয়া, অত্যাধিক রাত্রি জাগরন, গুরুপাক খাদ্য গ্রহণ, খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম করা ইত্যাদি কারণেও কোষ্ঠবদ্ধতা বা কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। অর্থাৎ মল কম বের হয়, যা অন্ত্রে পড়ে পড়ে পচে।
আবার এমনও হয় পায়খানা করতে বসে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করলেও ভালো পায়খানা হয় না বা খুব সামান্য পরিমাণে পায়খানা হয়। গর্ভবতী মহিলাদেরও এ রোগের শিকার হতে হয়। এক এক সময় এমন অবস্থা হয় যে মনে হয় প্রাণ বেরিয়ে যাবে। পায়খানা পরিষ্কার না হওয়ার জন্য মনের মধ্যে একটা অস্বস্তি লেগে থাকে, মনের ফুর্তি নষ্ট হয়ে যায়, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, মাথা ভার ভার লাগে, কোমরে ব্যথা হয়, মানসিক ও শারীরিক দুর্বলতা দেখা যায়, মুখের রুচি নষ্ট হয়ে যায়, খাওয়া-দাওয়ার ইচ্ছা থাকে না, অন্ত্রে পায়খানা জমতে শুরু করলে তার প্রভাব গিয়ে পড়ে মস্তিষ্কে। যথাসময়ে চিকিৎসা করলে ভালো হয়ে যায়, অন্যথায় পুরনো হয়ে গেলে এই রোগ নিয়ে অনেক জটিল সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এটা এমন একটা রোগ যা ছোট-বড়, ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু সকলের হতে পারে। এটিকে ঠিক স্বতন্ত্র কোন রোগ বলা যাবে না। শরীরে জন্ম নেয়া বা জন্ম নিচ্ছে এমন কোন রোগের লক্ষণ মাত্র।
প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে মুঠো মুঠো ঔষধ খাওয়ার ফলেও ভয়ঙ্কর কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। অন্য কোন রোগ বা দুর্বলতা, গরিষ্ঠ ভোজন, কাঁচা, বাসি, পচা খাদ্য গ্রহণ ইত্যাদি কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য খুব সহজেই হতে পারে। জন্ডিস রোগ, অর্শ, প্রয়োজনের তুলনায় কম খাওয়া, রাত্রি জাগরন, সুনিদ্রার অভাব ইত্যাদি কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। যারা নিয়মিত নেশাদ্রব্য গ্রহণ করেন তাদেরও কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে।
উল্লেখ্য যারা খেটে খাওয়া দিনমজুর শ্রেণীর মানুষ দিনরাত পরিশ্রম করেন তাদের কোষ্ঠবদ্ধতা খুব কম হয়। অন্যদিকে যারা শারীরিক পরিশ্রম কম করে মানসিক পরিশ্রম বেশী করে তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। এর কারণ হলো বেশি শরীরের পরিশ্রম যারা করেন তাদের মাংসপেশি সচল থাকে, তাদের খাদ্য খুব সহজেই হজম হয়। অন্যদিকে বিলাসী ও অপরিশ্রমী লোকেরা যা খান তা সরাসরি অন্ত্রে গিয়ে পড়ে থাকে, ফলে তাদেরও কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। কখনও কখনও হজম না হওয়া খাদ্য পায়খানার মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে আসে। অন্ত্রে ঠিকমতো না যাওয়াতে এবং অন্ত্রের শ্লেমার আধিক্য ঘটলেও কোষ্ঠকাঠিন্যের পথ প্রশস্ত হয়। অন্ত্রের কোথাও হঠাৎ চাপ পড়তে শুরু করলেও কোষ্ঠবদ্ধতা হতে পারে। অত্যধিক টক বা কিছু অহিতকর পদার্থ সেবন করলেও কোষ্ঠবদ্ধতা হতে পারে। এগুলি সেবন না করাই ভালো।
কিছু কিছু লোক আছেন যারা নিয়মিত বা ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করে না। যখন যা পান তাই দিয়ে উদরপূর্তি করেন এবং বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়েন। খাওয়া-দাওয়ার পর কিছুক্ষণ পদচারণা করা হজমের পক্ষে সহায়ক, চট করে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারেনা। অত্যধিক চা কফি বাজার থেকে আনা রেডিমেড খাবার পাকাশয় ও অন্ত্রের সক্রিয়তা কে নষ্ট করে দেয়। এতে পাচন শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে পাচন ক্রিয়া বিপর্যস্ত ও বিধ্বস্ত হয়ে যায়। ফলে পাচন অঙ্গ অসহায় হয়ে ঝুলতে শুরু করে। এসব খাওয়ার পর কোষ্ঠকাঠিন্য তো হয়ই, উপরন্ত গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো গ্যাসের সমস্যা শুরু হয়ে যায়। গ্যাস ও কোষ্ঠকাঠিন্য দুটোর মিলিত আক্রমণে আমাদের সুস্থ জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, ফলে জীবন হয় দুর্বিষহ।
ভাবনা চিন্তা না করে এভাবে ওষুধ খেলে নানা রকম অন্যান্য রোগের উপদ্রব হয়। বিশেষ করে অন্ত্রের যে স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক ক্ষমতা তা নষ্ট হয়ে যায় এবং পরবর্তীকালে এটা একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। পরে পায়খানা যাওয়ার জন্য কোন ওষুধ না খেলে পায়খানার হতে চায় না। শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা যদি শুধু ওষুধ নির্ভর হয়ে পড়ে তাহলে খারাপ লক্ষণ বলেই জানবেন। এমনকি এতে প্রাণ পর্যন্ত সংকটাপন্ন হয়ে পড়তে পারে। আরও একটা কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে থাইরয়েড হরমোনের অভাব হলেও কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।
চিকিৎসা শুরু করার পর পরীক্ষা মাধ্যমে এটা জানা সম্ভব হয়। তবে এরকম ঘটনা খুব কমই হয়। কিছু কিছু রোগী সংক্রমনের ফলে এই রোগের শিকার হয়ে পড়েন, এর মধ্যে আমিবা এবং ব্যাসিলাস উল্লেখযোগ্য। অনেক সময় অন্ত্রের পুরনো শোথ থেকেও এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। কোন কায়িক পরিশ্রম না করা, অলস শরীর যাদের, তাদেরও কোষ্ঠবদ্ধতা হতে দেখা যায়, নিয়মিত কোষ্ঠ পরিষ্কার হওয়ার জন্য শরীরের মধ্যকার যন্ত্রাদি সচল সক্রিয় থাকা দরকার।
সেই কারণেই যারা সকালে প্রাতঃভ্রমণ করেন বা ব্যায়াম করেন তাদের পায়খানার সমস্যা হয় না বললেই চলে। প্রবীণ বয়সে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ শিথিল হয়ে পড়ে, এই বয়সে তাদের অধিকাংশকেই পায়খানার সমস্যায় ভুগতে হয়। এমনটি হয় অন্ত্রের কার্যক্ষমতা কমে গেলে। কেউ কেউ মৃত্যুর আগে পর্যন্ত এই রোগে ভোগে।
যাদের পায়খানার সমস্যা থাকে তাদের জিভে ময়লার স্তর পড়ে থাকে। মুখ দিয়ে দুর্গন্ধ বের হয়, দুর্গন্ধযুক্ত বাতকর্ম হয়। কখনো রোগীর এক সপ্তাহ পর্যন্ত পায়খানা হয় না, হলেও খুব কম পরিমাণে হয়। যতটা খাবার রোগী খায় সেই অনুপাতে মল বের হয় না। ফলে রোগী নিজেও মানসিক অস্বস্তিতে ভোগেন। যখন পায়খানা হয় তা খুব শক্ত, খুব কষ্ট করে বের হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগীর অজীর্ণ, অরুচি, গ্যাসের সমস্যা, পেট ফাঁপা, ঘুম পাওয়া, বারবার হাই ওঠা, শরীর ভারী ইত্যাদি লক্ষণ দৃষ্ট হয়। এক কথায় এটা জেনে রাখা দরকার যে মানুষের যদি দীর্ঘদিন ধরে এরকম চলতে থাকে তাহলে সে নানারকম শারীরিক ও মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। প্রথম থেকেই রোগকে গুরুত্ব করে সঠিক চিকিৎসা অবলম্বন করলে রোগী তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে।
কোষ্ঠবদ্ধতা, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি একই রোগের বিভিন্ন নাম। এটি একটি সাধারণ বা কমন রোগ। অধিকাংশ লোকই কমবেশি এ রোগের শিকার হন। কেউ কেউ তো আমৃত্যু এই রোগে ভোগেন। এটা এমনই একটা বিরক্তিকর রোগ যে, একবার শুরু হলে কিছুতেই ছাড়তে চায় না। অথচ আমরা খুব কম লোকেই এই রোগকে গুরুত্ব দিই। আমরা অনেকেই জানিনা বহু রোগের মূল কারণ হলো কোষ্ঠকাঠিন্য। নানা কারণে এই রোগটি আমাদের শরীরে ভর করে,
অধিকাংশ লোক কোষ্ঠ সাফ করার জন্য চট করে জোলাপের অভ্যাস করে ফেলেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, জোলাপ অন্ত্রকে আরো বেশি অক্ষম, অসহায় করে তোলে। সামান্য বা তুচ্ছ মনে করে যারা এই রোগকে গুরুত্ব দেন না, তাদের পরবর্তী জীবনে অনেক বড় খেসারত দিতে হয়। কিছু কিছু ওষুধ থেকেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এছাড়া ক্রনিক ডায়রিয়া ডিসেন্ট্রি ইত্যাদি সহ অন্যান্য কিছু রোগে ভোগা, পাচকরস কম বা বেশি ক্ষরণ হওয়া, অতিরিক্ত মানসিক চাপ ইত্যাদি থেকেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। বেশি পান বা মাদক সেবন করা ইত্যাদি কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।
মেয়েদের জরায়ু সংক্রান্ত রোগ, মাসিকের সময়, গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে, পক্ষাঘাতে বা অন্য কোন রোগে দীর্ঘদিন বিছানায় শুয়ে থাকলেও রোগীর কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তাছাড়া কতগুলো কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে কিছু কিছু রোগ যেমন ইউরেমিয়া, হাইপার থাইরয়েডিজম, অ্যানিমিয়া, লিভারের রোগ ইত্যাদিতে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। এছাড়া টিউমার, সেরিব্রাল থ্রমবসিস, পারকিনসন ডিজিজ এবং স্পাইনাল আঘাত ইত্যাদি কিছু নিউরোলজিক গোলমাল থেকেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
মেয়েদের জরায়ু সংক্রান্ত রোগ, মাসিকের সময়, গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে, পক্ষাঘাতে বা অন্য কোন রোগে দীর্ঘদিন বিছানায় শুয়ে থাকলেও রোগীর কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তাছাড়া কতগুলো কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে কিছু কিছু রোগ যেমন ইউরেমিয়া, হাইপার থাইরয়েডিজম, অ্যানিমিয়া, লিভারের রোগ ইত্যাদিতে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। এছাড়া টিউমার, সেরিব্রাল থ্রমবসিস, পারকিনসন ডিজিজ এবং স্পাইনাল আঘাত ইত্যাদি কিছু নিউরোলজিক গোলমাল থেকেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
আপাতদৃষ্টিতে রোগটিকে সাধারণ বা সামান্য মনে হলেও, এটি ভীষণ বেশি বিরক্তিকর ও জেদি রোগ। চট করে পিছু ছাড়তে চায় না। অন্ত্রের শক্তিহীনতা বা অন্ত্রের দুর্বলতা এ রোগের অন্যতম কারণ। অন্ত্র এতটাই দুর্বল, ক্ষীন ও অসহায় হয়ে পড়ে যে ঠিকমত মুভমেন্ট করতে সমর্থ হয় না। নানা ধরনের বিষয়, পরিস্থিতি, স্থান পরিবর্তন, খাওয়া-দাওয়া, আহার বিহার এর হঠাৎ পরিবর্তন এই রোগ হতে সাহায্য করে।
এই রোগের গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর মধ্যে আরো কয়েকটি হলো চর্বিবহুল মেদ যা পরিপাক যন্ত্রের কর্মক্ষমতাকে অত্যন্ত দুর্বল করে দেয়। কোষ্ঠবদ্ধতার একটা লক্ষণ জল কম খাওয়া, এতে অন্ত্রে গ্রন্থি রসের অভাব ঘটে। হিস্টিরিয়া রোগ আক্রান্তদের বিশেষ করে মহিলাদের কষ্টকর হতে দেখা যায়। সামান্য কোষ্ঠকাঠিন্য হলে হাতের কাছে যে ওষুধ পাওয়া যায় তা খেয়ে নেওয়ার ফলে সমস্যা আরো বেশি বেড়ে যায়। যারা অবুঝের মত এবং অজ্ঞতাবশত এভাবে ওষুধ খান, তারা জানেন না এ ধরনের ওষুধ কখন কি অবস্থায় কি কারনে সেবন করা উচিত।
-:বিশেষ বিশেষ লক্ষণ:-
যাদের নিয়মিত কোষ্ঠকাঠিন্য লেগে থাকে তাদের প্রায় সব সময় খিদে ধীরে ধীরে কমতে থাকে। আবার কখনো কখনো রোগীর ক্ষুধা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। মাঝেমধ্যে পেটে হালকা হালকা ব্যথা হয়। কারো কারো প্রায় সব সময় ব্যথা লেগে থাকে, তবে সকলেরই যে ব্যথা হয় তা নয়, অনেকের কোন ব্যথা থাকে না বা কখনো কখনো সামান্য হয়। পেটে পাথর এর মত শক্ত পচা খাবার জমে থাকে, যা থেকে মাথা ঘোরে, গা ব্যথা করে, গা গোলায়, কোন কাজ করতে ইচ্ছা করে না, মনে কোনো ফুর্তি থাকে না, মানসিক উদ্বেগ ইত্যাদি নানা অসুবিধা লক্ষণ প্রকাশ পায়।
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam links in message