দীর্ঘদিন ধরে অম্ল ও গ্যাস্ট্রিক বা অন্যান্য কারণে পাকস্থলী বা ডিওডিনামে ক্ষত বা ঘা হয়। একে বলে ডিওডেনাল আলসার বা গ্যাস্ট্রিক আলসার। এগুলোকেই একসঙ্গে বলে পেপটিক আলসার। অনেকে আবার একে গ্যাস্ট্রো ডিওডেনাল আলসারও বলেন।
সাধারণত এই রোগ তাদেরই হয় যারা দীর্ঘদিন অজীর্ণ বা অম্ল রোগে আক্রান্ত হয়। অনেক সময় দীর্ঘদিন প্রদাহ না হয়ে, অম্ল থেকেই হঠাৎই ক্ষত বা আলসার হয়ে থাকে। দীর্ঘ অনিয়ম দীর্ঘদিনের চাপা অম্বল থেকে এই রোগ হতে পারে। যেহেতু এই ক্ষত বা ঘা গুলি সাধারণত পরিপাক নালীতেই হয়। তাই পাকাশয় বা ডিএডিনামের ক্ষত কে এক কথায় পেপটিক আলসার বলে। যদিও সাধারণ লোক একে গ্যাস্ট্রিক আলসার নামেই জানে আর তা ভুল ও না।
বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের এই রোগের আক্রমণ খুব কম হয়। উল্লেখ্য যে সারা ভারতের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ পশ্চিমবঙ্গেই বেশি। পাকাশয় ও ডিওডেনাম ছাড়াও এই আলসার হতে পারে, যদিও তুলনায় কম যেমন খাদ্যনালীর নিচের অংশে স্টমাক ও জেজুনাম এর সংযোগস্থলের প্রান্তভাগে বা ধার ঘেঁষে মার্জিনাল আলসার অথবা সংযোগস্থলের ঠিক নিচে জেজু নামে জেজুনাল আলসার এবং ডাইভারটিকুলামে মেকেলস আলসার হয়।
-:বিশেষ বিশেষ কারণ:-
দীর্ঘদিন ধরে অম্ল ও গ্যাস্ট্রিক ও অন্যান্য কারণে পাকস্থলী বা ডিওডিনামে ক্ষত বা ঘা হয়। একে বলে ডিওডেনাল আলসার বা গ্যাস্ট্রিক আলসার।এগুলোকেই একসঙ্গে বলে পেপটিক আলসার অনেকে আবার একে গ্যাস্ট্রো ডিওডেনাল আলসারও বলেন। সাধারণত এই রোগ তাদেরই হয়, যারা দীর্ঘদিন অজীর্ণ বা অম্ল রোগে আক্রান্ত হয়। অনেক সময় দীর্ঘদিন প্রদাহ না হয়ে, অম্ল থেকেই হঠাৎই ক্ষত বা আলসার হয়ে থাকে। দীর্ঘ অনিয়ম, দীর্ঘদিনের চাপা অম্বল থেকে এই রোগ হতে পারে।
পেশাগত কারণে অনেক সময় এই রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। যেমন পরিসংখ্যানে বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন গ্যাস্ট্রিক আলসার ও পেপটিক আলসার সাধারণত বেশি হয় নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকেদের মধ্যে। অন্যদিকে ডিওডেনাল আলসার বেশি হয় যারা ব্যবসা ইত্যাদি করেন, বণিক শ্রেণি বা উচ্চ মধ্যবিত্তদের মধ্যে। উচ্চাকাঙ্ক্ষী লোকেদেরও এই আলসার বেশি হতে দেখা গেছে।
অসময়ে খাওয়া এই রোগের একটা মূল কারণ। এ ধরনের রোগে খাবার অন্ত্রে গিয়ে অ্যাসিড তৈরি করে এবং পরবর্তীকালে আলসার রোগের জন্ম দেয়। পরিসংখ্যানে এও দেখা গেছে যারা অত্যধিক বিড়ি, সিগারেট, তামাক সেবন করেন, তাদের প্রায় শতকরা 70 - 80 জন এই রোগের শিকার হয়ে পড়েন। বিশেষজ্ঞরা এ কথাও বলেছেন যে যারা অফিস কারখানা বা সংস্থায় দীর্ঘদিন কাজকর্ম করেন, তাদের খাওয়াদাওয়ার সময় থাকেনা, শোয়ার সময় থাকেনা, তাদের এই ধরনের আলসার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
নিয়ম করে সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় খাদ্য টুকু গ্রহণ করলে অবশ্যই তা টাটকা হওয়া বাঞ্ছনীয়, শুধু আলসারই নয় অনেক রোগ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকা যায়। এইজন্যই প্রবীণরা এখনো বলেন, না খেয়ে যত লোক আমাদের দেশে মরে তার চেয়ে খেয়ে মরে বেশি লোক। তাহলে দেখা যাচ্ছে পাকস্থলী থেকে যে পাচকরস বা গাস্ট্রিক জুস বের হয় তাতে পেপটিন, হাইড্রোক্লোরিক এসিড থাকে, যা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যকে সময়মতো হজম করতে সাহায্য করে। আবার এই এসিড অধিক ক্ষরণে পাকস্থলির ভেতরের লেয়ার ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে আলসার সৃষ্টি হয়। মনে রাখা দরকার যে, প্রায় সমস্ত মানুষেরই পাচক রসে পেপসিন ও হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড থাকে, তাই বলে তাদের সকলেরই আলসার হবে এ ধারণা সঠিক নয়। এদের মধ্যে 10 থেকে 15 শতাংশ লোকেরই আলসার হতে পারে। তাহলে প্রশ্ন আসছে আলসার থেকে আমাদের পাকস্থলীকে কে রক্ষা করে ?
পাকস্থলীর গায়ে মিউকাস মেমব্রেন রক্ষা কবজ এর মত আলসার থেকে পাকস্থলীকে বাঁচিয়ে রাখে। তাছাড়া পাকস্থলীর মধ্যে যে বাই কার্বনেট ক্ষরণ হয় তাও এসিডকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখে। যাইহোক গাস্ট্রিক অ্যাসিড সিক্রেশন এবং পাকস্থলী রক্ষাকারী মিউকাস রস ক্ষরণ এর মধ্যে একটা ব্যালেন্স বা ভারসাম্য থাকার দরুন সকলের আলসার হয় না বলে মনে করা হয়। এই ভারসাম্য বা ব্যালেন্সের অভাব ঘটলেই আলসার হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়।
দিনের-পর-দিন আহার বিহারে অনিয়ম, অত্যাচার, টক, ঝাল, তেল, ঘি সেবন, গুরুপাক খাদ্য গ্রহণ, অতিরিক্ত পান, জর্দা, চা, কফি, সিগারেট, মদ্যপান এবং সেইসঙ্গে মেন্টাল স্ট্রেস, যেমন হতাশা, অবসাদ, চিন্তা, উত্তেজনা, উদ্বেগ এগুলো সবই গ্যাস্ট্রিক সিক্রেশন বাড়িয়ে গ্যাস্ট্রিক আলসার কে আমন্ত্রণ করে বসে।
প্রসঙ্গত মনে রাখা দরকার অতিরিক্ত এসিড ক্ষরণ না হলেও গ্যাস্ট্রিক আলসার হতে পারে। সে ক্ষেত্রে রোগটি আরও জটিল বলে মনে করতে হবে, যা থেকে ভবিষ্যতে গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। কতকগুলি বিশেষ গ্রুপের ওষুধের সেবনে পাকস্থলীতে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়ে হেমারেজ পর্যন্ত হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষ ওষুধগুলো সেবন বন্ধ করে দিলে ঘা শুকিয়ে যায় এবং অসুবিধা ও চলে যায়, আবার খেলে আবার হয়। আর একটা জিনিস মনে রাখা দরকার ডিওডেনাল আলসার প্রায় সব ক্ষেত্রেই বেনাইন হয়। এর থেকে ক্যান্সার হওয়ার ভয় থাকে না, কিন্তু গ্যাস্ট্রিক আলসার ম্যালিগন্যান্ট হয়ে পড়ে, ক্যান্সারও হতে পারে।
-:বিশেষ বিশেষ লক্ষণ:-
প্রধান লক্ষণ হলো পেটে প্রায়ই কমবেশি ব্যথা লেগে থাকা সাধারণত ব্যথা হয়। খাওয়ার আধা ঘন্টা বা 1 ঘন্টা পরে, কখনো কখনো আবার খাওয়ার পরে পরেই বা খেতে খেতে ও ব্যথা উঠতে পারে। এসময় বমিও হতে পারে, বমি হলে হজম না হওয়া খাবার বমির সঙ্গে বেরিয়ে আসে, গলায় বুকে ব্যথাও থাকে, যার জন্য রোগী অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারে। বমির কিছু রক্ত যদি অন্ত্রে চলে যায়, তাহলে তা মলের সঙ্গে দৃষ্ট হয়, তবে তার রং হয় একটু কালচে লাল হয়। আলসার রোগীর পাচন ক্রিয়া কখনো সম্পূর্ণভাবে, কখনো অংশত নষ্ট হয়ে যায়। এরপর যেমন যেমন রোগ বাড়ে, তেমন তেমন রোগীর সমস্যা গুলো বাড়তে থাকে, ব্যথা-বেদনাও বাড়ে, আলসারের ব্যথা পিঠের দিকে চলে যায়। অনেক সময় খাওয়ার ঘন্টাদুয়েক পরেও ব্যথা হতে দেখা যায়। তবে ব্যথার পর যদি বমি হয়, তাহলে বিনা ওষুধেই ব্যথা কমে যায়। এই বমিতে রক্ত থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে। রোগীর ক্ষুধামন্দা হতে দেখা যায়, পেট ফাঁপা, মন্দাগ্নি হয়।
এইসব প্রাণঘাতী রোগ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, বসন্ত ইত্যাদি। এসব রোগ আলসার রোগের পরেই হতে পারে। এইসব রোগীর টিবি এমনকি ক্যান্সার রোগ পর্যন্ত হতে পারে। আলসার রোগীর পাকস্থলীতে শোথ পর্যন্ত হতে পারে, এই শোথ যদি খুব তীব্র হয়, তাহলে পাকস্থলীতে হাত দিলেই রোগী ব্যথা অনুভব করে। সাধারণ অবস্থায় বা ছোট ঘা বা ক্ষত হলে সাধারণত চিকিৎসায় সেরে যায়, অন্যথায় অপারেশন করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
একটা কথা মনে রাখা দরকার আলসার পাকাশয় এর যত কাছে থাকে ব্যথা শুরু হয় ততো দেরীতে। ক্ষত যত দূরে থাকে ব্যথা তত দ্রুত হয়। মূলত এই ব্যথার জন্য রোগীর খিদে মরে যায়, তার মনে ভয় লেগে থাকে যে খেলেই পেটে ব্যথা করবে, এতে হয় সে খাওয়া প্রায় ছেড়ে দেয়, নয়তো কম খেতে শুরু করে। এর ফলে রোগী ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়তে থাকে। মজার কথা এমন রোগীও পাওয়া যায় যারা বলেন ব্যথা ছিল কিন্তু খাওয়ার পর ব্যথা কমে গেছে।
সাধারণত চিৎ হয়ে শুলে আলসার রোগীর ব্যথা বেশি হয়। বাঁ দিকে ফিরে পা মুড়ে শুলে রোগী একটু আরাম বোধ করে। কখনো দাস্ত হলে বা জল খেলেও ব্যথা কমে যায়। পাকাশয় ক্ষত বা স্টোমাক আলসার এবং অন্ত্রের ক্ষত বা ডিওডেনাল আলসার দুটোর চিকিৎসা মোটামুটি এক রকমের হলেও লক্ষণ এর কিছু তফাৎ হয়। ডিওডেনাল আলসার এর সব লক্ষণই প্রায় গ্যাস্ট্রিক আলসারের মত হয়, তবে এক্ষেত্রে খালি পেটে ব্যথা হয়, কিন্তু খেলে ব্যথা কমে যায় গ্যাস্ট্রিক আলসার এর মত রক্ত বমি এতে সাধারণত হয় না, কিন্তু রক্ত পায়খানাও হতে পারে। এই আলসার সচরাচর হয় ডিওডেনাল বাল্বে, ডিওডেনাল এর প্রথম কিছুটা অংশকে বলে ডিওডেনাল বাল্ব যা পাইলোরাসের ইঞ্চিখানেকের মধ্যে অবস্থিত।
অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে অম্বল গলা বুক জ্বালা ইত্যাদি থাকে। ডিওডিনামে ক্ষত রোগের অ্যাসিড সব সময় বেশি বের হয়, তাই এদের খালি পেট হলেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। আলসার যেমনি হোক তা সময় মত সুচিকিৎসা না হলে এবং দীর্ঘদিন ভোগার পর রক্ত বমি, রক্ত পায়খানা, অ্যানিমিয়া, ছিদ্র হয়ে প্রচুর রক্তপাত, পেরিটোনাইটিস, সাবফ্রেনিক এবসেস এবং পাইলোরিক স্ট্রিকচার ও অবস্ট্রাকশন হতে পারে। কখনো আবার ডিওডেনাল আলসার প্যানক্রিয়াসে ছড়িয়ে ক্রনিক প্যানক্রিয়েটাইটিস হতে পারে।
পেপটিক আলসার আলাদা করে চেনা যায় যখন দুধ অ্যালকালি বা এন্টাসিড জাতীয় কিছু খেলে বেদনার উপশম হয়, বমিতে রক্ত, মলে কালচে লাল রক্ত আসে, মল পরীক্ষায় অকাল্ট ব্লাড পাওয়া যায় ইত্যাদি। এতেও নিশ্চিত হওয়া না গেলে বেরিয়াম মিল এক্সরে বা এন্ডোস্কোপি অথবা আলট্রাসনোগ্রাফি করে নেওয়া যায়।
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam links in message