-:রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য :-
যাদের খাওয়া-দাওয়ার মধ্যে কোন শুদ্ধি অশুদ্ধি নেই। খাওয়ার সময় শুদ্ধতার দিকে নজর দেন না, তারাই তুলনামূলকভাবে কৃমি রোগের শিকার হয়ে পড়েন। অবশ্য গ্রীষ্মপ্রধান হওয়ার কারণে আমাদের দেশে এমনিতেই কৃমির প্রকোপ বেশি। কমবেশি অনেকেই কৃমি রোগে ভোগেন।
অন্ত্র কৃমি অনেক রকমের হয়, এর মধ্যে কিছু খালি চোখে দেখা যায় আবার কিছু খালি চোখে দেখা যায় না। এই কৃমি গুলোর প্রতিক্রিয়া থেকেও অনেক রকমের রোগ সৃষ্টি হয়।
-:কৃমি কাদের হয়:-
আগেই বলেছি এই রোগ তুলনামূলক গ্রীষ্মপ্রধান দেশে বেশি হয়। আমাদের দেশ ভারত ও গ্রীষ্মপ্রধান, তাই আমাদের দেশেও কৃমির যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। এটা এমনই একটা রোগ যা যেকোন সময় যেকোন বয়সের মানুষের হতে পারে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে প্রবীনদের পর্যন্ত এ রোগ হতে পারে। এমনকি বাড়ির পোষা কুকুর বিড়ালের পর্যন্ত এ রোগ হতে পারে।
ক্ষুধা ইত্যাদিতেও পরিবর্তন লক্ষিত হয়। খাওয়ার কোন বাঁধাধরা নিয়ম থাকে না, কারণ তাদের খিদে ঠিকমতো লাগেনা, মুখে রুচি থাকে না। আবার উল্টোটাও হয় একসময় এত খিদে পেয়েছে মনে হয় কয়েক জনের খাবার সে একাই খেয়ে নেবে। চিকিৎসাশাস্ত্রে এই ধরনের ক্ষিদেকে রাক্ষসী ক্ষুধা বা দূষিত ক্ষুধা বলে। যাদের পেটে কৃমি থাকে তাদের অনেককেই এক টুকরো মাটি, খোলামকুচি, উনুনের মাটি ইত্যাদি প্রিয় খাদ্যদ্রব্যের মত খেতে দেখা যায়। অর্থাৎ সোঁদা গন্ধযুক্ত দ্রব্যে তাদের তীব্র আকর্ষণ থাকে, যা প্রচলিত খাদ্যদ্রব্য না হলেও তারা গ্রহণ করে।
-:কৃমির প্রকারভেদ:-
B. টিনিয়া সাজিনাটা
C. টিনিয়া সোলিয়াম
D. টিনিয়া অ্যাকনিকক্কাস
2. জিয়ারডিয়া
3. সুতা কৃমি
4. টিনিয়া নানা
5. গোলকৃমি
6. গুনিয়া ওয়ার্ম
7. হুইপ ওয়ার্ম
8. হুক ওয়ার্ম
প্রকার বিশেষে কৃমি গুলির বিবরণ
1. ফিতা কৃমি
এ ধরনের কৃমি গুলি হয় ফিতার মত চ্যাপ্টা এবং লম্বা রং হয় সাদা, তাই এই কৃমি গুলোকে টেপ ওয়ার্ম ও বলা হয়। সাধারণত মানুষের দেহে সচরাচর যেসব ফিতা কৃমির সংক্রমণ দেখা গেছে তা হচ্ছে টিনিয়া সোলিয়াম, টিনিয়া সাজিনাটা, হাই মেনোলেপিস নানা, ডিফিলোবোথ্রিয়াম লাটাম, ইচিনোকাক্কাস গ্রানুলোসাস, ডিফিলিডিয়াম ক্যানিনাম ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে একমাত্র ডয়ার্ফ টেপ কৃমি ও ইচিনোকক্কাস ছাড়া আর সব কৃমি গুলি লম্বায় 10 থেকে 30 ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়।
A. টিনিয়া লাটা
টিনিয়া লাটা ফিতা কৃমি প্রজাতির কৃমি, লম্বায় 7 থেকে 10 ফুট হয়। এর শরীর 4 থেকে 5 হাজার খণ্ডে বিভক্ত। এদের ডিম বিশেষ করে পরিষ্কার জলের মধ্যে ফাটে, ডিম থেকে খুব ছোট সরু কৃমি বের হয়। যা প্রায়শই মাছ বা অন্য কোন জলচর প্রাণী খেয়ে নেয়, এবার ওই মাছ আধকাঁচা অবস্থায় মানুষ খায় এবং পুনরায় মানুষের শরীরে গিয়ে বাসা বাঁধে।
B.টিনিয়া সাজিনাটা
এই প্রজাতির কৃমি একটু বেশি লম্বা হয় বিশেষ করে গরুর শরীরের অন্ত্রে এই কৃমি পাওয়া যায়। লম্বা 5 ফুট বা তার থেকেও বেশি হয়। চোসার জন্য চারটি শুঁড় থাকে কিন্তু ঝুলে থাকার জন্য একটা হুক থাকে না। এদের শরীর মোটামুটি 1000 অংশে বিভক্ত।
C. টিনিয়া সোলিয়াম
এটি টিনিয়া সাজিনাটার চেয়ে কিছু কম লম্বা হয় এরা লম্বায় 6 থেকে 12 ফুট পর্যন্ত হতে পারে। এরা এদের জীবন চক্র শুরু করে শুকরের অন্ত্রে আশ্রয় নিয়ে। এদের চোসার শুঁড়ের চারদিকে 26 টি হুক থাকে, যেগুলোর সাহায্যে এরা শুকরের অন্ত্রে চিপটে লেগে থাকে। এছাড়া এই প্রজাতির কৃমি শুকরের চোখ মাংস যকৃত ও মস্তিষ্কে বসবাস করে। এদের শরীর 500 টি খন্ডে বা তার কিছু বেশি খন্ডে বিভক্ত।
D. টিনিয়া একিনোকক্কাস
এটি ফিতাকৃমি জাতির কৃমি এদের শরীর 3 টি খন্ডে বিভক্ত, শেষ খন্ড বেশি বড় হয়। তবে ফিতাকৃমি জাতীয় কৃমি হলেও তুলনায় এদের লম্বা অনেক কম। এদের মাথা লম্বাটে তাতে চোষার জন্য চারটি দাঁতের মত থাকে। এদের ডিম থেকে সরাসরি কৃমির জন্ম হয় কৃমি। এই কৃমির অধিকাংশই পাওয়া যায় কুকুর ও ভেড়ার মধ্যে। যখন ভেড়া বা কুকুরের মল জলের সঙ্গে মিশে যায় এবং সেই জল কোন না কোন ভাবে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে, তখন এই কৃমি মানুষের শরীরে গিয়ে আশ্রয় নেয়। প্রকৃতিগত ভাবে এই কৃমি
হয় খুব উৎপীড়ক ধরনের। এরা অন্ত্র অতিক্রম করে সোজা রক্তের মধ্যে গিয়ে প্রবেশ করে। রক্তের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে এরা যখন এদের মনের মত সুবিধাজনক ও নিরাপদ জায়গা পেয়ে যায় তখন সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এদের পছন্দের জায়গা হল যকৃৎ, এখানে ওরা খুব ভালো ও নিরাপদ ভাবে নিজেদের বংশবিস্তার করতে পারে। শরীরের যে অংশ ছাউনি ফেলে সেখানে বন্ধনীর মতো ঘিরে ফেলে। এটাকে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে হাইডেটিড সিস্ট বলা হয়। এই ধরনের কৃমির মধ্যে এক ধরনের ক্ষার ভর্তি থাকে। এই কোষ থেকে কৃমির মাথা বেরোয়, এই কোষ মানুষের শরীর থেকে বের হয়ে কুকুর বা ভেড়ার শরীরে প্রবেশ করে কৃমি রূপ ধারণ করে।
-:ফিতাকৃমির উপস্থিতির লক্ষণ:-
মানুষের শরীরে এই কৃমি বাসা করলে খুব উল্লেখযোগ্য লক্ষণ দেখা যায় না। ফলে রোগীর পেটে কৃমি বাসা বেঁধেছে তা বাইরে থেকে টের পাওয়া যায় না। কিন্তু হঠাৎ করে একদিন ভয়ঙ্কর লক্ষণ প্রকট হতে শুরু করে। যেমন দূষিত ক্ষুধা বা রাক্ষসী খিদে, মানবিক বিচার-বুদ্ধি বিভ্রম, হাত পা কাপা ইত্যাদি। এরকম লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে রোগীর মল, রক্ত পরীক্ষা করা দরকার। মলে ও রক্তে যদি কৃমির খন্ড দৃষ্টিগোচর হয়, তাহলে যথাশীঘ্র সম্ভব চিকিৎসা শুরু করে দেয়া উচিত। এই কৃমির প্রকোপে অন্যান্য কৃমির মত রক্তাল্পতা দেখা যায় বটে তবে ততটা ভয়ঙ্কর হয় না।
5 গোলকৃমি
এই কৃমি দেখতে হয় কেঁচোর মত। কেঁচো বর্ষার সময় পচা জায়গায় জন্মায়। কিন্তু পেটের মধ্যে এই জাতীয় কৃমির জন্ম হয় যখন অন্ত্রের মধ্যে পচন ধরে। যদিও এই কৃমির নিবাস অন্ত্রে তবুও কখনো কখনো পাকাশয়, স্বরযন্ত্র, নাক, পায়ু, যোনী বা অন্ন প্রণালীর মধ্যে এবং শরীরের অন্য জায়গায় ঢুকে শরীরের প্রভূত ক্ষতিসাধন করে। এদের মধ্যে যেগুলো স্ত্রী সেগুলো লম্বায় 10 থেকে 16 ইঞ্চি হয় আর পুরুষ কৃমি 6 থেকে 12 ইঞ্চি লম্বা হয়।
-: উপস্থিতির লক্ষণ :-
এই কৃমি যদি কারো ক্ষুদ্রান্ত থাকে তাহলে সেখানে ফুলে যায়। পিত্তে থাকলে পিত্ত অবরোধ তৈরি করে এতে রোগী জন্ডিস রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কখনো কখনো এরা অ্যাপেন্ডিক্স কেও অবরুদ্ধ করে ফেলে এতে অনেক জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয়। এই কৃমি অন্ত্রের মধ্যে ছিদ্র করে ফেলতে পারে তখন তাকে পেরিটোনাইটিস বলে। এই কৃমির উপদ্রব এর ফলে রোগীর খিদে কমে যায়, আবার কখনো কখনো অত্যাধিক খিদে বেড়ে যায়। ক্ষুদ্রান্তে আক্রমণের ফলে ছোট ছোট বাচ্চাদের বমি হয়, দাঁত কিড়মিড় করে, পাতলা পায়খানা হয়, নাকের মধ্যে চুলকানি হয় তাই অনবরত নাক চুলকায়।
6 গুনিয়া ওয়ার্ম
7 হুইপ ওয়ার্ম
এই কৃমিগুলো দেখতে অনেকটা ঘোড়ার চাবুকের মতো। সেই কারণে এদের কশাকার কৃমি বলা হয়। এরা খুব ক্ষতিকারক নয় তবে কখনো কখনো এরা উপ- অন্ত্রে শোথ উৎপন্ন করে। রোগী রক্তাল্পতার শিকার হয়ে পড়ে, কারো কারো ক্ষেত্রে হজমের গোলমাল ও গ্যাস হতেও দেখা যায়। এদের পাওয়া যায় সাধারণত উপঅন্ত্র ও ক্ষুদ্রান্তে।
8 হুক ওয়ার্ম
এরা দেখতে অনেকটা হুকের মত হয় সেই কারণেই ইংরেজিতে এদের হুক ওয়ার্ম বলে। অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ধরনের হয় কৃমি গুলো ক্ষুদ্রান্তের উপর এদের নিবাস। অন্ত্রের সঙ্গে খুব শক্তভাবে এরা চেপটে লেগে থাকে। ওই অবস্থাতে এরা ক্রমাগত রোগীর রক্ত চুষে খায় এবং বংশবৃদ্ধি করে চলে। মলের সঙ্গে সংখ্যায় খুব কম বের হলেও এদের সংখ্যা কিন্তু অসংখ্য। এই বিপদজনক কৃমি গুলির মুখে গোল দানার মত চারটে দাগ দৃষ্ট হয় এবং দুটো হুক এর মত দাঁত থাকে । ওই দাঁত বা হুক দিয়ে অন্ত্রের মধ্যে গেঁথে এরা নিচের দিকে ঝুলে থাকে।
-: উপস্থিতি লক্ষণ:-
যাদের খাওয়া-দাওয়ার মধ্যে কোন শুদ্ধি অশুদ্ধি নেই। খাওয়ার সময় শুদ্ধতার দিকে নজর দেন না, তারাই তুলনামূলকভাবে কৃমি রোগের শিকার হয়ে পড়েন। অবশ্য গ্রীষ্মপ্রধান হওয়ার কারণে আমাদের দেশে এমনিতেই কৃমির প্রকোপ বেশি। কমবেশি অনেকেই কৃমি রোগে ভোগেন।
- এই কৃমি এক ধরনের প্যারাসাইট দের অন্তর্গত। মানবদেহে অসংখ্য জীবাণু বসবাস করে, এগুলো এত সূক্ষ্ম হয় যে খালি চোখে দেখা যায় না। কিছু কৃমি যেমন আমাদের শরীরের সুরক্ষায় সাহায্য করে, তেমন বেশকিছু কৃমি সুরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে ফেলার জন্য সদা তৎপর । তাই এই কৃমি মারা আমাদের কাছে শুধু সমস্যাই নয় একটা বিড়ম্বনাও, কারণ শত্রু কৃমি কে মারতে গিয়ে আমরা আমাদের বন্ধু ক্রিমি গুলোকেও মেরে ফেলি।
অন্ত্র কৃমি অনেক রকমের হয়, এর মধ্যে কিছু খালি চোখে দেখা যায় আবার কিছু খালি চোখে দেখা যায় না। এই কৃমি গুলোর প্রতিক্রিয়া থেকেও অনেক রকমের রোগ সৃষ্টি হয়।
-:কৃমি কাদের হয়:-
আগেই বলেছি এই রোগ তুলনামূলক গ্রীষ্মপ্রধান দেশে বেশি হয়। আমাদের দেশ ভারত ও গ্রীষ্মপ্রধান, তাই আমাদের দেশেও কৃমির যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। এটা এমনই একটা রোগ যা যেকোন সময় যেকোন বয়সের মানুষের হতে পারে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে প্রবীনদের পর্যন্ত এ রোগ হতে পারে। এমনকি বাড়ির পোষা কুকুর বিড়ালের পর্যন্ত এ রোগ হতে পারে।
অনুসন্ধান করে দেখা গেছে কৃমিরোগ অস্বাস্থ্যকর নোংরা খাবার-দাবার, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকার ফলে বেশি হয়। বিশেষ করে জল যদি বিশুদ্ধ না হয় তাহলে সেই জল পান করে আমাদের অন্ত্রে কৃমি রোগ বাসা বাঁধতে পারে। অনেকে আছে যারা কাঁচা শাকসবজি যখন যেখানে পায় খেয়ে নেয়, সেগুলো পরিষ্কার করে বা ভালো করে জলে ধুয়ে খাওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করে না। এর ফলে শরীরে কৃমির জন্ম হয়। কাঁচা শাকসবজি যেমন ধনেপাতা, টমেটো, গাজর, পেঁপে ইত্যাদি খাওয়া কিছু অপরাধ নয়। কিন্তু সেগুলো ভালো করে পরিষ্কার করে ধুয়ে মুছে খেলে শরীরে কৃমি হওয়ার ততটা ভয় থাকে না।
ফলের মধ্যে কলা আমরা বেশি খাই, কিন্তু অত্যধিক পাকা কলা খাওয়া নিরাপদ নয়। এতে খুব দ্রুত পেটে কৃমি জন্মাতে পারে। মিষ্টি বেশি খেলে শরীরে কৃমি হয় বলে সাধারণ প্রচলিত ধারণা আছে। কিন্তু বাস্তব তথ্য হলো কৃমির সঙ্গে মিষ্টির সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। মিষ্টি জিনিস কৃমির খাদ্য নয় কিন্তু পরোক্ষ সম্পর্ক একটা আছে মিষ্টি খাবার খেলে শরীরে কফ বৃদ্ধি হয় যা, কৃমির পক্ষে বেশ নিরাপদ জায়গা। সুতরাং শরীরে কফ বৃদ্ধি যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কৃমি থেকে বাঁচার এটা একটা উপায়।যে সমস্ত খাবার থেকে অম্লরস তৈরি হয় সে সমস্ত খাবার থেকেও সাবধানে থাকা উচিত, কারণ এই অম্লরস প্রস্তুতকারক খাদ্য থেকে কৃমির জন্ম হয়।
বেশি শাকসবজি ভক্ষণ শরীরের পক্ষে ভাল হলেও শরীরের দিকে নজর রেখে খাওয়া দরকার ।এগুলি থেকে অন্ত্র কৃমির উৎপাত বাড়তে পারে। অত্যধিক তরলপদার্থ থেকেও কৃমির জন্ম হতে পারে। শুনতে অবাক লাগলেও এটা সত্যি যে দিবানিদ্রা থেকে পেটে কৃমি হতে পারে। রাতের ঘুম শরীরের পক্ষে প্রয়োজনীয় ও স্বাস্থ্যকর হল দিনের ঘুম স্বাস্থ্যকর নয়। অনেকে অজ্ঞতাবশত হাতের কাছে যা পায় তা খেয়ে ফেলে। এই খাবারগুলোর মধ্যে অনেক খাবার থাকে, যারা পরস্পর বিরোধী। এই পরস্পরবিরোধী খাবারগুলো থেকে বিক্রিয়া শুরু হয়, তাই পরস্পর বিরোধী খাদ্য কোন মতেই খাওয়া উচিত নয়। এগুলি পেটের মধ্যে মিলিতভাবে গিয়ে অবাঞ্ছিত উৎপাত শুরু করে দেয়, ফলে মানুষ অনেক রকম রোগের শিকার হয়। পরস্পর বিরোধী খাদ্য থেকে অন্ত্রের কৃমি জন্ম হয়।
নিয়মিত ব্যায়াম শরীরের প্রয়োজন,অলস জীবন থেকেও অনেক রোগ বাসা বাঁধতে পারে। কায়িক পরিশ্রম করলে নিয়মিত ব্যায়াম ইত্যাদি করলে শরীর সুস্থ থাকে। এছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম করলে খাবার-দাবার হজমে সহায়ক হয় অর্থাৎ অত্যধিক অলসতায় পাকস্থলী ও অন্ত্রের গতি শিথিল হয়ে পড়ে, পাচন ক্রিয়ায় বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি হয় যা কৃমির বংশবৃদ্ধির সহায়ক হয়ে থাকে।
অনেকে মনে করেন মাছ মাংস বেশি খেলে শরীর সুস্থ হয় শরীরে বল হয়। সংযমের মধ্যে থেকে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় খেলে তেমন কিছু ক্ষতি হয় না, কিন্তু সংযমী হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এগুলো গলাধঃকরণ করলে তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতি হয় বেশি।এসব থেকেও কৃমি বৃদ্ধির সুযোগ হয়। খাওয়ার পর গুড় খাওয়া নাকি ভালো কিন্তু সময় অসময় না দেখে গুড় খাওয়া ঠিক নয়, এতে কৃমির বেঁচে থাকার ও বেড়ে ওঠার অক্সিজেন পায়। অত্যধিক লবণ খাওয়া ভালো নয় এর থেকে কৃমির জন্ম হয়, তাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত লবণ না খেয়ে খাবারের সঙ্গে যতটা প্রয়োজন ততটাই শ্রেয়।
-:কৃমির বিশেষ বিশেষ লক্ষণ:-
ইদানিং এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা শাস্ত্রে অনেক রোগের মূল উৎস হিসেবে কৃমি কে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এর অন্তর্গত যে সমস্ত কৃমি পাওয়া যায় তা অনেক রকমের হয়। আবার প্রতিটি ধরনের কৃমির লক্ষণ হয় ভিন্ন ভিন্ন রকমের। শরীরের মধ্যে যদি কোন একটি শ্রেণীর কৃমি বের হতে থাকে তখন তার লক্ষণ খুব দ্রুত প্রকট হয়ে পড়ে। কৃমিরোগের যে সমস্ত লক্ষণ দেখা যায় তার মধ্যে বমি, অস্বস্তি, বুক ধড়ফড় করা, পেট ফাঁপা, হজমের গোলমাল, অরুচি, অতিসার, অম্লতা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। কৃমি রোগী রাতে ঘুমের ঘোরে দাঁত কিড়মিড় করে ঠিকমতো ঘুম হয়না। ঘুম হলেও মাঝেমাঝে ঘুম ভেঙে যায়।
-:কৃমির বিশেষ বিশেষ লক্ষণ:-
ইদানিং এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা শাস্ত্রে অনেক রোগের মূল উৎস হিসেবে কৃমি কে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এর অন্তর্গত যে সমস্ত কৃমি পাওয়া যায় তা অনেক রকমের হয়। আবার প্রতিটি ধরনের কৃমির লক্ষণ হয় ভিন্ন ভিন্ন রকমের। শরীরের মধ্যে যদি কোন একটি শ্রেণীর কৃমি বের হতে থাকে তখন তার লক্ষণ খুব দ্রুত প্রকট হয়ে পড়ে। কৃমিরোগের যে সমস্ত লক্ষণ দেখা যায় তার মধ্যে বমি, অস্বস্তি, বুক ধড়ফড় করা, পেট ফাঁপা, হজমের গোলমাল, অরুচি, অতিসার, অম্লতা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। কৃমি রোগী রাতে ঘুমের ঘোরে দাঁত কিড়মিড় করে ঠিকমতো ঘুম হয়না। ঘুম হলেও মাঝেমাঝে ঘুম ভেঙে যায়।
যাদের পেটে কৃমি বংশবৃদ্ধি করছে তাদের মুখ দিয়ে প্রায় সময় পচা দুর্গন্ধ বের হয়, এছাড়া নোংরা দুর্গন্ধযুক্ত ঢেকুর ওঠে, অত্যন্ত দুর্গন্ধময় বাতকর্ম হয়। কোন কোন রোগীর ক্ষেত্রে এমনটা হতে পারে যে, রোগীর চেহারা হয়ে যায় হলুদ, নিস্তেজ, বিবর্ণ, মুখের স্বাদ বদলে যায়, পেটের মধ্যে লাগাতার একটু অস্বস্তি লেগে থাকে। মলদ্বার ও নাকে সুড়সুড় করে, চুলকায়। যদিও এ ধরনের লক্ষণ বেশি দেখা যায় ছোট বাচ্চাদের মধ্যে, তার মানে এই নয় যে বড়দের এই ধরনের লক্ষণ দেখা যায় না। আরো কিছু লক্ষণ, নাভির কাছে কাটা ক্ষতের মতো কখনো কখনো তীব্র ব্যথা হয়, কেউ কেউ আবার পেটে হালকা ধরনের ব্যথার কথা বলে। এ ধরনের রোগীর পেটে কৃমি আছে বা থাকতে পারে মনে করে চিকিৎসার ব্যাপারটা ভাবতে হয়। এই সমস্ত কৃমি পেটে লেপ্টে থাকা অবস্থায় তারা রোগীর রক্ত চুষে খায়।
সেই সঙ্গে রোগী যা খাদ্য খায় তার পুষ্টিগুণ তারা শোষণ করে নেয়। এর পরিণাম যা হওয়ার তাই হয় রোগী দিনে দিনে রক্তশূন্য হয়ে পড়ে এবং পুষ্টির অভাবে ধীরে ধীরে শরীর দুর্বল হয়ে পড়তে থাকে। এছাড়া কৃমি রোগের মধ্যে প্রায়ই কোষ্ঠবদ্ধতা দেখা যায়। কখনো কখনো উদরাময় রোগ হয় এসব ততক্ষণ থাকে যতক্ষণ পেটের মধ্যে বসবাসকারী কৃমির উৎপাত না কমে। অনেক সময় কৃমি রোগীর মুখে বারবার জল আসে, বারবার মূত্রত্যাগ করতে ইচ্ছা করে, পেট শক্ত হয়ে যায়, শরীরের ওজন কমে যায়। অনেক কৃমি রোগীর মেজাজ হয়ে যায় খিটখিটে, ছোট বাচ্চা হলে ছিঁচকাঁদুনে হয়ে পড়ে। কখনো কিছুতেই তাদের ভালো লাগে না, বিছানায় অজ্ঞাতসারে মলমূত্র ত্যাগ করা, পেটে বা অন্ত্রের কৃমি থাকার আরেকটি লক্ষণ। খাওয়া-দাওয়া
ক্ষুধা ইত্যাদিতেও পরিবর্তন লক্ষিত হয়। খাওয়ার কোন বাঁধাধরা নিয়ম থাকে না, কারণ তাদের খিদে ঠিকমতো লাগেনা, মুখে রুচি থাকে না। আবার উল্টোটাও হয় একসময় এত খিদে পেয়েছে মনে হয় কয়েক জনের খাবার সে একাই খেয়ে নেবে। চিকিৎসাশাস্ত্রে এই ধরনের ক্ষিদেকে রাক্ষসী ক্ষুধা বা দূষিত ক্ষুধা বলে। যাদের পেটে কৃমি থাকে তাদের অনেককেই এক টুকরো মাটি, খোলামকুচি, উনুনের মাটি ইত্যাদি প্রিয় খাদ্যদ্রব্যের মত খেতে দেখা যায়। অর্থাৎ সোঁদা গন্ধযুক্ত দ্রব্যে তাদের তীব্র আকর্ষণ থাকে, যা প্রচলিত খাদ্যদ্রব্য না হলেও তারা গ্রহণ করে।
এরা অনবরত যেখানে-সেখানে পিচ পিচ করে থুতু ফেলে। বাচ্চাদের মুখ দিয়ে লালা বের হয় এ ধরনের রোগী যদি বয়স্ক হয় তাদের রাতের ঘুমের ঘোরে এত বেশি লালা নিঃসৃত হয় যে বালিশ ভিজে যায়। কখনো কখনো কৃমি রোগীর মলের মধ্যে রক্ত পাওয়া যায়। আবার অনেক সময় রোগীর পেটে বা অন্ত্রের কৃমি আছে তার কোনো লক্ষণ উপর থেকে দেখা যায় না বা বোঝা যায়না। পায়খানার পর মলের মধ্যে কৃমি বা কৃমির অংশবিশেষ ডিম দেখে টের পাওয়া যায় যে রোগীর পেটে কৃমি আছে।
-:কৃমির প্রকারভেদ:-
আগেই বলেছি মানবদেহে যখন কৃমি বাসা বাঁধে তখন তাদের সংখ্যা হয় অসংখ্য, কিন্তু সেই অসংখ্য কৃমি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। এ ধরনের কৃমির উপদ্রব অন্ত্র উদর যকৃৎ ইত্যাদি জায়গায় দেখা যায়।
1. ফিতা কৃমি 👉 এই কৃমি চার ধরনের হয়
1. ফিতা কৃমি 👉 এই কৃমি চার ধরনের হয়
B. টিনিয়া সাজিনাটা
C. টিনিয়া সোলিয়াম
D. টিনিয়া অ্যাকনিকক্কাস
2. জিয়ারডিয়া
3. সুতা কৃমি
4. টিনিয়া নানা
5. গোলকৃমি
6. গুনিয়া ওয়ার্ম
7. হুইপ ওয়ার্ম
8. হুক ওয়ার্ম
প্রকার বিশেষে কৃমি গুলির বিবরণ
1. ফিতা কৃমি
এ ধরনের কৃমি গুলি হয় ফিতার মত চ্যাপ্টা এবং লম্বা রং হয় সাদা, তাই এই কৃমি গুলোকে টেপ ওয়ার্ম ও বলা হয়। সাধারণত মানুষের দেহে সচরাচর যেসব ফিতা কৃমির সংক্রমণ দেখা গেছে তা হচ্ছে টিনিয়া সোলিয়াম, টিনিয়া সাজিনাটা, হাই মেনোলেপিস নানা, ডিফিলোবোথ্রিয়াম লাটাম, ইচিনোকাক্কাস গ্রানুলোসাস, ডিফিলিডিয়াম ক্যানিনাম ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে একমাত্র ডয়ার্ফ টেপ কৃমি ও ইচিনোকক্কাস ছাড়া আর সব কৃমি গুলি লম্বায় 10 থেকে 30 ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়।
তবে লম্বা তে ছোট-বড় যাই হোক না কেন এদের মাথা ও দেহ বেশ আলাদা করে চেনা যায়। এদের দেহ কয়েকটা ভাগে ভাগ করে নেয়া যায়। মাথার কাছে যে অংশটা তা ছোট, তারপর ক্রমশ বড় হয়। শেষ ভাগ বা অংশটা হয় সব থেকে বড় মাথার কাছের অংশটা একটু নরম হলেও পরের অংশ বেশ দৃঢ় মজবুদ হয়। এই অংশটি স্ত্রী-পুরুষের জননেন্দ্রিয় থাকে পুরুষ এবং স্ত্রী কৃমির গর্ভাশয় স্পষ্ট লক্ষ্য করা যায়। ফিতাকৃমির মাথাটা হয় গরুর লেজের মত । মুখে শুঁড়ের মতো থাকে চোসার জন্য, হুক এর সাহায্যে এরা অন্ত্রের মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে লেপ্টে থাকে।
এদের মধ্যে টিনিয়া সোলিয়াম প্রজাতির কৃমি গুলি 25 ফুট বা তারও বেশি লম্বা হয়। বোথিয়া ক্যাপেলস প্রজাতির কৃমি গুলি 30 থেকে 80 ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে দেখা যায়। ফিতাকৃমির শরীর দেখতে হয় অনেকটা লাউ বা চাল কুমড়োর দানার মত রং হয়, ঐরকম সাদা। এদের মধ্যে লিঙ্গ ভেদ হয়না সে কারণে এগুলিকে স্বয়ংজাত কৃমি ও বলা হয়ে থাকে। আগেই বলা হয়েছে কৃমির স্ত্রী-পুরুষ স্বতন্ত্র হয় না একই শরীরে স্ত্রী ও পুরুষ জননেন্দ্রিয় থাকে। একটা অংশে স্ত্রী অন্য অংশে পুরুষ। প্রকৃতপক্ষে কৃমির জন্ম হয় ঘাস, জমি ইত্যাদি জায়গায় যেখানেই যখন ওরা কোন চতুষ্পদ প্রাণীর সংস্পর্শে আসে অর্থাৎ তাদের পেটের মধ্যে গিয়ে ঢোকে তখন থেকেই তাদের নতুন জগতের সংরচনা।
নতুন পথচলা শুরু হয় আবারও চতুষ্পদ প্রাণী গরু ছাগল যাই হোক না কেন। এদের মাংস কাঁচা বা আধা সেদ্ধ অবস্থায় মানুষ খেলে ওই কৃমি মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। এভাবেই মানুষের শরীরে বংশবিস্তার করে এবং পরবর্তীকালে মলের সঙ্গে বেরিয়ে আসে। মলের সঙ্গে যদি লাউয়ের দানার মতন দেখা যায় তাহলে কোন দ্বিধা না করেই ওই মল পরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসা শুরু করে দেয়া উচিত। কৃমির এই টুকরোগুলো পেটের মধ্যে ফেটে গিয়ে ডিমগুলি এদিক-ওদিক লেপ্টে থাকে। অবশ্য কিছু আছে যেগুলো মলের মধ্য দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে তারপর ফাটে। তফাৎ শুধু এই যে পেটের মধ্যে ফাটলে বংশবৃদ্ধি পেটের মধ্যেই হয়, কিন্তু যদি বাইরে বেরিয়ে এসে ফাটে তাহলে তা জলের সঙ্গে মিশে গরু ছাগলের পেটে চলে যায় এবং সেখানে বংশবৃদ্ধি করে।
আবার যখন ওই সমস্ত পশুর কাঁচা বা আধাসেদ্ধ মাংস মানুষ খায়, কৃমি তখন মানুষের পেটে গিয়ে জায়গা করে। মানুষের শরীরে গিয়ে ওদের আকারে পরিবর্তন আসে। তাহলে দেখা যাচ্ছে পুরো ব্যাপারটা চক্রের মতো ঘোরে। মলের সঙ্গে বেরিয়ে যাওয়া কৃমির অংশবিশেষ বা ডিম পশু পাখি বা মাছ খায়, আবার ওই সমস্ত পশু পাখি মাছ যখন মানুষ খায়, অবশ্যই কাঁচা বা কম সেদ্ধ, তখন তারা আবার গিয়ে মানুষের পেটে আশ্রয় নেয়। এই ভাবেই এটি চক্রাকারে চলতে থাকে।
আগেই বলেছি ফিতাকৃমি চার প্রকার
আগেই বলেছি ফিতাকৃমি চার প্রকার
A. টিনিয়া লাটা
টিনিয়া লাটা ফিতা কৃমি প্রজাতির কৃমি, লম্বায় 7 থেকে 10 ফুট হয়। এর শরীর 4 থেকে 5 হাজার খণ্ডে বিভক্ত। এদের ডিম বিশেষ করে পরিষ্কার জলের মধ্যে ফাটে, ডিম থেকে খুব ছোট সরু কৃমি বের হয়। যা প্রায়শই মাছ বা অন্য কোন জলচর প্রাণী খেয়ে নেয়, এবার ওই মাছ আধকাঁচা অবস্থায় মানুষ খায় এবং পুনরায় মানুষের শরীরে গিয়ে বাসা বাঁধে।
B.টিনিয়া সাজিনাটা
এই প্রজাতির কৃমি একটু বেশি লম্বা হয় বিশেষ করে গরুর শরীরের অন্ত্রে এই কৃমি পাওয়া যায়। লম্বা 5 ফুট বা তার থেকেও বেশি হয়। চোসার জন্য চারটি শুঁড় থাকে কিন্তু ঝুলে থাকার জন্য একটা হুক থাকে না। এদের শরীর মোটামুটি 1000 অংশে বিভক্ত।
C. টিনিয়া সোলিয়াম
এটি টিনিয়া সাজিনাটার চেয়ে কিছু কম লম্বা হয় এরা লম্বায় 6 থেকে 12 ফুট পর্যন্ত হতে পারে। এরা এদের জীবন চক্র শুরু করে শুকরের অন্ত্রে আশ্রয় নিয়ে। এদের চোসার শুঁড়ের চারদিকে 26 টি হুক থাকে, যেগুলোর সাহায্যে এরা শুকরের অন্ত্রে চিপটে লেগে থাকে। এছাড়া এই প্রজাতির কৃমি শুকরের চোখ মাংস যকৃত ও মস্তিষ্কে বসবাস করে। এদের শরীর 500 টি খন্ডে বা তার কিছু বেশি খন্ডে বিভক্ত।
D. টিনিয়া একিনোকক্কাস
এটি ফিতাকৃমি জাতির কৃমি এদের শরীর 3 টি খন্ডে বিভক্ত, শেষ খন্ড বেশি বড় হয়। তবে ফিতাকৃমি জাতীয় কৃমি হলেও তুলনায় এদের লম্বা অনেক কম। এদের মাথা লম্বাটে তাতে চোষার জন্য চারটি দাঁতের মত থাকে। এদের ডিম থেকে সরাসরি কৃমির জন্ম হয় কৃমি। এই কৃমির অধিকাংশই পাওয়া যায় কুকুর ও ভেড়ার মধ্যে। যখন ভেড়া বা কুকুরের মল জলের সঙ্গে মিশে যায় এবং সেই জল কোন না কোন ভাবে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে, তখন এই কৃমি মানুষের শরীরে গিয়ে আশ্রয় নেয়। প্রকৃতিগত ভাবে এই কৃমি
হয় খুব উৎপীড়ক ধরনের। এরা অন্ত্র অতিক্রম করে সোজা রক্তের মধ্যে গিয়ে প্রবেশ করে। রক্তের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে এরা যখন এদের মনের মত সুবিধাজনক ও নিরাপদ জায়গা পেয়ে যায় তখন সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এদের পছন্দের জায়গা হল যকৃৎ, এখানে ওরা খুব ভালো ও নিরাপদ ভাবে নিজেদের বংশবিস্তার করতে পারে। শরীরের যে অংশ ছাউনি ফেলে সেখানে বন্ধনীর মতো ঘিরে ফেলে। এটাকে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে হাইডেটিড সিস্ট বলা হয়। এই ধরনের কৃমির মধ্যে এক ধরনের ক্ষার ভর্তি থাকে। এই কোষ থেকে কৃমির মাথা বেরোয়, এই কোষ মানুষের শরীর থেকে বের হয়ে কুকুর বা ভেড়ার শরীরে প্রবেশ করে কৃমি রূপ ধারণ করে।
-:ফিতাকৃমির উপস্থিতির লক্ষণ:-
মানুষের শরীরে এই কৃমি বাসা করলে খুব উল্লেখযোগ্য লক্ষণ দেখা যায় না। ফলে রোগীর পেটে কৃমি বাসা বেঁধেছে তা বাইরে থেকে টের পাওয়া যায় না। কিন্তু হঠাৎ করে একদিন ভয়ঙ্কর লক্ষণ প্রকট হতে শুরু করে। যেমন দূষিত ক্ষুধা বা রাক্ষসী খিদে, মানবিক বিচার-বুদ্ধি বিভ্রম, হাত পা কাপা ইত্যাদি। এরকম লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে রোগীর মল, রক্ত পরীক্ষা করা দরকার। মলে ও রক্তে যদি কৃমির খন্ড দৃষ্টিগোচর হয়, তাহলে যথাশীঘ্র সম্ভব চিকিৎসা শুরু করে দেয়া উচিত। এই কৃমির প্রকোপে অন্যান্য কৃমির মত রক্তাল্পতা দেখা যায় বটে তবে ততটা ভয়ঙ্কর হয় না।
সামান্য চিকিৎসায় খুব সহজেই এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায় সে তুলনায় টিনিয়া লেটা প্রজাতির কৃমিতে অনেক বেশি রক্তাল্পতা দেখা যায়। মানুষের লিভার বা যকৃতে জন্ম হয় টিনিয়া একিনোকক্কাস প্রজাতির কৃমির। কোনো কোনো রোগীর মস্তিষ্ক, ফুসফুস, বৃক্ক, মাংসপেশিতে জন্ম হতে দেখা গেছে। ছোট ছোট কোষে বিশেষ কোন ক্ষতিকারক লক্ষণ দৃষ্ট হয় না, তবে যকৃত যদি এই কৃমি হয় তাহলে যকৃৎ আকারে বড় হয়ে যায়, যার ভারগিয়ে পরে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ। বুকে চাপ পড়লে শ্বাস, পিত্ত প্রণালীর উপর চাপ পড়লে জন্ডিস এবং শিরাতে চাপ পড়লে ফুলে যায়। এক কথায় কোষ বড় হয়ে যে জায়গায় ফাটে সেখানেই কৃমির উৎপাত বাড়ে। সেখানেই কৃমির লক্ষণ স্পষ্ট দৃষ্টিগোচর হয়। অবশ্য এমন হয় এই প্রজাতির কৃমি শরীরে থাকলে সারা জীবনেও টের পাওয়া যায় না।
2. জিয়ারডিয়া
যদিও এই কৃমি খুব একটা ক্ষতিকারক নয় তবুও কখনো কখনো এ ধরনের কৃমির প্রকল্পে অতিসার রোগ হতে দেখা যায়। মল পরীক্ষা করলেই কৃমি এর উপস্থিতি টের পাওয়া যায় এই রোগের চিকিৎসা খুব সামান্য ও সহজ।
3.সুতা কৃমি
সাধারণত, এই কৃমি বেশি দেখা যায় ছোটদের মলাশয়, বৃহদান্ত্র, ক্ষুদ্রান্ত ইত্যাদি জায়গায়। বাচ্চারা সাধারণত ধুলো, মাটিতে খেলা করে হাত-পা নোংরা করে। ওই ধুলোমাটিতেই থাকে কৃমির ডিম। খেলতে খেলতেই বাচ্চারা হাত মুখে দেয় আর এভাবেই কৃমি মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। সংখ্যায় এই কৃমি হয় হাজার হাজার। প্রায় 20 থেকে 25 শতাংশ বাচ্চারা এই রোগে ভোগে। এই কৃমি দেখতে হয় খুব সরু সুতোর মতো। এদের মধ্যে স্ত্রী কৃমিদের যখন ডিম দেবার সময় হয়, তখন
2. জিয়ারডিয়া
যদিও এই কৃমি খুব একটা ক্ষতিকারক নয় তবুও কখনো কখনো এ ধরনের কৃমির প্রকল্পে অতিসার রোগ হতে দেখা যায়। মল পরীক্ষা করলেই কৃমি এর উপস্থিতি টের পাওয়া যায় এই রোগের চিকিৎসা খুব সামান্য ও সহজ।
3.সুতা কৃমি
সাধারণত, এই কৃমি বেশি দেখা যায় ছোটদের মলাশয়, বৃহদান্ত্র, ক্ষুদ্রান্ত ইত্যাদি জায়গায়। বাচ্চারা সাধারণত ধুলো, মাটিতে খেলা করে হাত-পা নোংরা করে। ওই ধুলোমাটিতেই থাকে কৃমির ডিম। খেলতে খেলতেই বাচ্চারা হাত মুখে দেয় আর এভাবেই কৃমি মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। সংখ্যায় এই কৃমি হয় হাজার হাজার। প্রায় 20 থেকে 25 শতাংশ বাচ্চারা এই রোগে ভোগে। এই কৃমি দেখতে হয় খুব সরু সুতোর মতো। এদের মধ্যে স্ত্রী কৃমিদের যখন ডিম দেবার সময় হয়, তখন
তারা অন্ত্র থেকে একটু সরে গিয়ে মলদ্বারের কাছে চলে যায় এবং সেখানেই ডিম পাড়ে। ফলে মলদ্বার জ্বালা করে, ভীষন চুলকায়। বাচ্চারা মরিয়া হয়ে কখনো বাঁ হাতে কখনো ডানহাতে অনবরত মলদ্বার চুলকায়। এতে হাতে ওই কৃমির ডিম লেগে যায়, তারপর সেই হাত পুনরায় মুখে দিলে তা শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এতে রোগ সারার মতো অবস্থায় এসেও সারতে চায় না। ক্রমাগত নতুন করে রোগের উদ্ভব হয়। আর এই কারনেই কৃমি বাচ্চাদের শরীরে দীর্ঘদিন ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকে। বাচ্চারা যখন রাতে ঘুমায় স্ত্রী কৃমি রা তখন মলদ্বারে নেমে এসে ডিম পাড়ে।
এর ফলে মলদ্বারে একটি অস্বস্তি হয়। ফলে বাচ্চারা সারারাত ভালো করে ঘুমাতে পারে না, বারবার ঘুম ভেঙে যায়। মলদ্বার হাত দিয়ে অনবরত চুলকাতে থাকে। এক্ষেত্রে বাচ্চাদের পায়জামা শুতে পরিয়ে দিলে ভালো হয়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে একটু নজর দিলেই এই রোগ সহজে ছড়াতে পারে না, বা পুনরায় বাচ্চার শরীরে গিয়ে ঢুকতে পারে না। যেমন রাতে শোয়ার আগে বাচ্চার হাত পরিষ্কার করে যদি পরিষ্কার মোজা পরিয়ে দেয়া হয়, তাহলে রোগ ছড়াতে পারেনা। তাছাড়া রাতের পরা পোশাক বা ব্যবহার করা কাপড় সকালে গরম জলে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
বাচ্চাদের হাতের আঙ্গুলে নখ না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে না, হলে চুলকানোর সময় নখের আঁচড়ে মলদ্বারে ঘা হয়ে যেতে পারে। বাচ্চাদের কৃমি থাকলে তাদের মলের সঙ্গে হাজার হাজার সংখ্যায় জীবন্ত কিলবিল করা নড়াচড়া করা কৃমি দৃষ্টিগোচর হয়। এই কৃমির মধ্যে যেগুলো
স্ত্রী সেগুলো হয় বড়, সে তুলনায় পুরুষ কৃমি ছোট হয়। এই কৃমি বাচ্চাদের পেটে বেশি দেখা গেল বড়দের যে হয় না তা নয়। তবে তার শতকরা ভাগ খুব কম। অন্যদিকে বাচ্চারা যেমন যেমন বড় হয় কৃমির প্রকোপও তেমন তেমন কম হতে থাকে।
স্ত্রী সেগুলো হয় বড়, সে তুলনায় পুরুষ কৃমি ছোট হয়। এই কৃমি বাচ্চাদের পেটে বেশি দেখা গেল বড়দের যে হয় না তা নয়। তবে তার শতকরা ভাগ খুব কম। অন্যদিকে বাচ্চারা যেমন যেমন বড় হয় কৃমির প্রকোপও তেমন তেমন কম হতে থাকে।
-:সুতো কৃমির উপস্থিতির লক্ষণ:-
এই কৃমিতে আক্রান্ত বাচ্চাদের নাকে চুলকানি তো হয় সেইসঙ্গে পায়ুতে অত্যধিক জ্বালা বেদনা এবং চুলকানি হয়। অনেক রোগী রাতের বেলায় ঘুমন্ত অবস্থায় বিছানায় প্রস্রাব করে ফেলে। ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এমনটি হয়। মলদ্বার পরীক্ষা করলে সেখানে চারপাশে কৃমি গুলো কিলবিল করতে দেখা যায়। বাচ্চারা ঘুমন্ত অবস্থায় দাঁত কিড়মিড় করে, ঘুমের ঘোরে প্রলাপ বকে। সন্দেহ হওয়ার পরে মল পরীক্ষা করলে মলের মধ্যে কৃমির ডিম এবং পূর্ণবয়স্ক কৃমি দৃষ্টিগোচর হয়। এ জাতির কৃমি থেকে বাচ্চাদের সম্পূর্ণ মুক্ত করা একটু মুশকিল বটে কিন্তু অসম্ভব নয়।
এই কৃমিতে আক্রান্ত বাচ্চাদের নাকে চুলকানি তো হয় সেইসঙ্গে পায়ুতে অত্যধিক জ্বালা বেদনা এবং চুলকানি হয়। অনেক রোগী রাতের বেলায় ঘুমন্ত অবস্থায় বিছানায় প্রস্রাব করে ফেলে। ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এমনটি হয়। মলদ্বার পরীক্ষা করলে সেখানে চারপাশে কৃমি গুলো কিলবিল করতে দেখা যায়। বাচ্চারা ঘুমন্ত অবস্থায় দাঁত কিড়মিড় করে, ঘুমের ঘোরে প্রলাপ বকে। সন্দেহ হওয়ার পরে মল পরীক্ষা করলে মলের মধ্যে কৃমির ডিম এবং পূর্ণবয়স্ক কৃমি দৃষ্টিগোচর হয়। এ জাতির কৃমি থেকে বাচ্চাদের সম্পূর্ণ মুক্ত করা একটু মুশকিল বটে কিন্তু অসম্ভব নয়।
বাচ্চারা ধুলো মাটি না মেখে খেলাধুলা করে না, তবুও যদি খাওয়া-দাওয়া ব্যবহারের পাত্র, হাত-পা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখা যায়, তাহলে এই কৃমি থেকে বাচ্চাদের মুক্ত করা অনেকটা সম্ভব। এছাড়া যে কোনো খাবার বা পানীয়ের এর পরিছন্নতা থাকা দরকার। শাকসবজি বা তরিতরকারি রান্নার আগে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট এর জল দিয়ে অথবা গরম জল দিয়ে ধুয়ে মুছে নিলে ভালো হয়, বিশেষ করে ফল ও সবজি। এতে অন্তত খানিকটা রেহাই পাওয়া যেতে পারে, তাছাড়া জল ফুটিয়ে খেলে এর থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাওয়া যায়।
4 টিনিয়া নানা
এই ক্রিমি গুলি হয় খুব ছোট, এগুলি শরীরে থাকলে তেমন কোনো লক্ষণ ফুটে উঠে না। মল পরীক্ষা করলে তাতে কৃমির ডিম যদি পাওয়া যায় তাহলে কৃমির উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। কখনো কখনো এদের শরীরের মধ্যে উপস্থিতি সারাজীবনেও টের পাওয়া যায় না, চুপচাপ এরা শরীরের মধ্যে বংশবৃদ্ধি করে চলে।
এই ক্রিমি গুলি হয় খুব ছোট, এগুলি শরীরে থাকলে তেমন কোনো লক্ষণ ফুটে উঠে না। মল পরীক্ষা করলে তাতে কৃমির ডিম যদি পাওয়া যায় তাহলে কৃমির উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। কখনো কখনো এদের শরীরের মধ্যে উপস্থিতি সারাজীবনেও টের পাওয়া যায় না, চুপচাপ এরা শরীরের মধ্যে বংশবৃদ্ধি করে চলে।
5 গোলকৃমি
এই কৃমি দেখতে হয় কেঁচোর মত। কেঁচো বর্ষার সময় পচা জায়গায় জন্মায়। কিন্তু পেটের মধ্যে এই জাতীয় কৃমির জন্ম হয় যখন অন্ত্রের মধ্যে পচন ধরে। যদিও এই কৃমির নিবাস অন্ত্রে তবুও কখনো কখনো পাকাশয়, স্বরযন্ত্র, নাক, পায়ু, যোনী বা অন্ন প্রণালীর মধ্যে এবং শরীরের অন্য জায়গায় ঢুকে শরীরের প্রভূত ক্ষতিসাধন করে। এদের মধ্যে যেগুলো স্ত্রী সেগুলো লম্বায় 10 থেকে 16 ইঞ্চি হয় আর পুরুষ কৃমি 6 থেকে 12 ইঞ্চি লম্বা হয়।
মোটা হয় 5 থেকে 6 মিলিমিটার এদের রং গোলাপি সাদা ধূসর আবার মোটা চিকন পাতলা কিনারা যুক্ত হয়। স্ত্রীকে লম্বা এবং সোজা কিন্তু পুরুষ কৃমির লেজ শেষ মাথা ভাগ হয় সামান্য বাঁকা অনেকটা হনুমানের লেজের মতো গোল হয়ে মুড়ে থাকে। স্ত্রী কৃমি একদিনে 1,000 ডিম পারে, ওই দিন থেকে প্রায় এক মাসের মধ্যেই কুচো কৃমির জন্ম হয়। ওই ডিম হাজার হাজার সংখ্যায় মলের সাথে বেরিয়ে যায় মল। পরীক্ষা করলে এদের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। আবার ডিম, ফল, শাকসবজি
ইত্যাদির মাধ্যমে বা জলের সঙ্গে অন্য সুস্থ মানুষের দেহে প্রবেশ করে তাকে কৃমিগ্রস্ত করে তোলে। এগুলো থাকে জোড়ায় জোড়ায়।
ইত্যাদির মাধ্যমে বা জলের সঙ্গে অন্য সুস্থ মানুষের দেহে প্রবেশ করে তাকে কৃমিগ্রস্ত করে তোলে। এগুলো থাকে জোড়ায় জোড়ায়।
-: উপস্থিতির লক্ষণ :-
এই কৃমি যদি কারো ক্ষুদ্রান্ত থাকে তাহলে সেখানে ফুলে যায়। পিত্তে থাকলে পিত্ত অবরোধ তৈরি করে এতে রোগী জন্ডিস রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কখনো কখনো এরা অ্যাপেন্ডিক্স কেও অবরুদ্ধ করে ফেলে এতে অনেক জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয়। এই কৃমি অন্ত্রের মধ্যে ছিদ্র করে ফেলতে পারে তখন তাকে পেরিটোনাইটিস বলে। এই কৃমির উপদ্রব এর ফলে রোগীর খিদে কমে যায়, আবার কখনো কখনো অত্যাধিক খিদে বেড়ে যায়। ক্ষুদ্রান্তে আক্রমণের ফলে ছোট ছোট বাচ্চাদের বমি হয়, দাঁত কিড়মিড় করে, পাতলা পায়খানা হয়, নাকের মধ্যে চুলকানি হয় তাই অনবরত নাক চুলকায়।
এছাড়া বাচ্চাদের অন্ত্রে এগুলো গুচ্ছ হয়ে অবরোধ তৈরি করে। মুখ দিয়ে লালা বের হয়। খিদের সময় যখন পেট খালি হয়ে যায় তখন এগুলো পাকাশয়ের দিকে যেতে শুরু করে। এ সময় বমি হয়, গা গোলায় এবং আরো অন্যান্য লক্ষণ প্রকাশ পায়। কখনো কখনো দু-একটা কৃমি বমির সময় মুখ দিয়ে বের হতে দেখা যায়। সব সময় রোগীর মুখে দুর্গন্ধ লেগে থাকে। চোখ মুখ বিবর্ণ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ছোট বাচ্চারা ঘুমের ঘোরে দাঁত কিড়মিড় করে। পেট ফুলে যায় হাত পা রোগা হতে শুরু করে। এই কৃমির বিষাক্ত প্রভাবে কারো কারো পিত্তদোষ দেখা যায়। যদি উপরোক্ত লক্ষণগুলো রোগীর মধ্যে দেখা যায় এবং পেটে কৃমি আছে বলে সন্দেহ হয় তাহলে মল পরীক্ষা করে চিকিৎসা শুরু করা হয় করা হয়।
6 গুনিয়া ওয়ার্ম
এই কৃমি জলের মধ্যে পাওয়া গেলেও যে জল অস্থির অনবরত বয়ে চলছে তাতে পাওয়া যায় না। স্থির জলে এদের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। এই জল কোন মানুষ পান করলেই এই প্রজাতির কৃমি শরীরে বাসা বাঁধে। তবে তুলনামূলক ভাবে পুরুষ কৃমির চেয়ে স্ত্রী কৃমি মানুষের শরীরে বেশি পাওয়া যায়। বেশিরভাগ মাংসপেশির মধ্যে এরা ঘোরাফেরা করে। এদের ডিম বের হয় মুখ দিয়ে। যখন ডিম পাড়ার সময় হয় তখন মাংসপেশি থেকে উঠে উপরের ত্বকের মধ্যে ঢুকে পড়ে। যে দিকটা এদের মাথা থাকে সেই দিকটা একটা খোলসের মত তৈরি করে।
ওই খোলস ভেঙে ডিম বাইরে বেরিয়ে আসে। যে গতিতে এদের ডিম বাইরে আসে সেই গতিতে ক্রিমিও বাইরে বেরিয়ে আসে। শেষে এদের লেজের দিকটা ঘুরে মাংসপেশির দৃঢ় অংশে গিয়ে কামড়ে বসে থাকে। সে কারণেই এরা সহজে বাইরে বের হয় না। যদি এদের বেরোবার গতি আর ডিম বেরোবার গতি থেমে যায় তাহলে ওই সময়ে জলের ধারা বয়ে গেলে পুনরায় এই কৃমি গুলি ডিম পাড়তে পাড়তে বাইরে বেরিয়ে আসতে শুরু করে। এগুলিকে অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে এবং নিপুণতার সঙ্গে বের করতে হয়। টেনে বের করার সময় যদি মাঝে ছিড়ে যায় তাহলে খুব মুশকিল, কৃমির ডিম সেখানে বিষক্রিয়া করে এবং বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করে।
7 হুইপ ওয়ার্ম
এই কৃমিগুলো দেখতে অনেকটা ঘোড়ার চাবুকের মতো। সেই কারণে এদের কশাকার কৃমি বলা হয়। এরা খুব ক্ষতিকারক নয় তবে কখনো কখনো এরা উপ- অন্ত্রে শোথ উৎপন্ন করে। রোগী রক্তাল্পতার শিকার হয়ে পড়ে, কারো কারো ক্ষেত্রে হজমের গোলমাল ও গ্যাস হতেও দেখা যায়। এদের পাওয়া যায় সাধারণত উপঅন্ত্র ও ক্ষুদ্রান্তে।
8 হুক ওয়ার্ম
এরা দেখতে অনেকটা হুকের মত হয় সেই কারণেই ইংরেজিতে এদের হুক ওয়ার্ম বলে। অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ধরনের হয় কৃমি গুলো ক্ষুদ্রান্তের উপর এদের নিবাস। অন্ত্রের সঙ্গে খুব শক্তভাবে এরা চেপটে লেগে থাকে। ওই অবস্থাতে এরা ক্রমাগত রোগীর রক্ত চুষে খায় এবং বংশবৃদ্ধি করে চলে। মলের সঙ্গে সংখ্যায় খুব কম বের হলেও এদের সংখ্যা কিন্তু অসংখ্য। এই বিপদজনক কৃমি গুলির মুখে গোল দানার মত চারটে দাগ দৃষ্ট হয় এবং দুটো হুক এর মত দাঁত থাকে । ওই দাঁত বা হুক দিয়ে অন্ত্রের মধ্যে গেঁথে এরা নিচের দিকে ঝুলে থাকে।
এই কৃমির রোগী যদি কোথাও খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে তাহলেও ঐ মল শুকিয়ে গেলে তাতে কৃমির ডিম জীবিত থাকে। যদি কোন সুস্থ মানুষ ওই মলের উপর দিয়ে হেটে যায় তাহলে গোড়ালির মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করে লসিকা বাহিনী ও শিরা হয়ে ফুসফুসে গিয়ে পৌঁছায়। যেখানে এরা কণ্ঠ, অন্ন নালীর মাধ্যমে পাকাশয় বা মধ্য অন্ত্রে বাসা করে ফেলে। এর মাস দুয়েক পর থেকে মল এর মধ্য দিয়ে এদের ডিম যাওয়া শুরু করে। ঐ মল মাটি ও জলের মধ্যে ওই কৃমির বীজ ধারণ করে থাকে। পরে সেই মাটি ও জল থেকে সুস্থ মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। কাদা ও জলে এদের অসংখ্য ডিম ও বাচ্চা বিদ্যমান থাকে এবং সেখানে ডিম ফুটে বংশবৃদ্ধি শুরু করে।
সেই মাটির সংস্পর্শে মানুষ কোন কারনে গেলে এরা ওই সুস্থ মানুষের ত্বক দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। ফুসফুসে এরা থাকলে থুতু বা কফের মধ্যে দিয়ে এরা বাইরে বেরিয়ে মাটিতে মিশে যায়। আবার যদি এই কৃমির বাহক থুতু বা কফ না ফেলে ক্রমাগত গিলে ফেলে তাহলে ঐ কৃমিরা কফের এর মাধ্যমে ক্ষুদ্রান্তের এক ধারে গিয়ে বাসা করে ফেলে এবং সেখানেই ক্রমাগত রোগীর রক্ত শোষণ করতে থাকে। এই কৃমি গুলো খুব একটা বড় হয় না। অসংখ্য মাত্রায় এরা অন্ত্রের মধ্যে কামড়ে লেগে থাকে এবং তাকে কাটতে শুরু করে এবং এর পাশাপাশি বিষ রক্তের মধ্যে প্রবাহিত করতে থাকে। রক্তের বিষক্রিয়ার ফলে ফুসফুস এবং হৃদপিণ্ড খানিকটা বড় হয়ে যায়। ফুসফুসের আবরণ ও কলিজাতে প্রদাহ শুরু হয়। অন্ত্রে ক্ষতের সৃষ্টি হয়, ক্রমাগত এদের রক্তচোষা ও রক্তের মধ্যে বিষ প্রবাহিত হওয়ার জন্য রোগীর শরীরে রক্তাল্পতা দেখা যায়।
-: উপস্থিতি লক্ষণ:-
শুধু রক্তাল্পতার নয়, এই ভয়ঙ্কর কৃমির প্রকোপে অন্য আরও অনেক দুর্বলতা শরীরে দেখা যায়। এতে শরীরের কোন কোন অংশে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, উদরাময় এবং শরীরের কোথাও কোথাও শোথ হতে দেখা যায়। রক্তের অভাব ঘটায় রোগে হলুদ হয়ে যেতে থাকে রোগী ক্রমশ বিবর্ণ নিস্তেজ ও দুর্বল হয়ে পড়ে। ক্ষুধামান্দ্য হতে দেখা যায়। প্রায়শই রোগীর বুক ধরফর করে, বমি বমি ভাব হয়, মাথা ঘুরে, শরীরে অস্থিরতা দেখা দেয়। কখনো কখনো বমি ও করে ফেলে, মলের সঙ্গে রক্ত পড়তে দেখা যায়। সব সময় মুখে জল আসে, বার বার থুথু ফেলে। ঘুমোবার সময় মুখ দিয়ে লালা পড়ে, খিটখিটে মেজাজ,রাতকানা ইত্যাদি লক্ষণ ও রোগীর মধ্যে দেখা যেতে পারে। রোগী সর্বদা কাশে,বুকের স্পন্দন বেড়ে যায়, দ্রুত শ্বাস পড়ে অর্থাৎ শ্বাসের গতি বেড়ে যায়।
একটা কথা অবশ্যই মনে রাখা দরকার যে, রোগী এই কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হলে সময়মতো চিকিৎসা না করা গেলে রোগীর শরীর ভেঙে পড়তে পারে এমনকি রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। এই কৃমি খুবই ভয়ঙ্কর তাই সন্দেহ হওয়া মাত্রই মল পরীক্ষা করে চিকিৎসা শুরু করে দেয়া দরকার। ছোট বাচ্চাদের এই রোগ হলে শরীরের গঠন সঠিক থাকেনা বা বৃদ্ধি হয় না। গোড়াতেই রোগের চিকিৎসা করলে রোগীকে সহজে নিরাময় করা সম্ভব কিছুদিন যথাযথ চিকিৎসা করলে এ রোগ সেরে যায়।
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam links in message